ঢাকা-কলম্বো দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে সম্মত

PM-6-1

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা আজ বিদ্যমান খাতগুলির পাশাপাশি ব্যাবসা ও বাণিজ্যে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানে পারস্পরিক সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে এবং বলেছে যে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনও সম্ভাবনার তুলনায় অনেক নিচে রয়েছে।

আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সরকারী আলোচনায় এই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো নিয়ে সরকারি পর্যায়ের বিষদ আলোচনা প্রায় এক ঘন্টা স্থায়ী ছিল। বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য তার সম্ভাবনার চেয়ে অনেক কম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) জন্য যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের এফটিএর প্রাথমিক সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়া উচিত।’ তিনি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, শ্রীলংকার বাজারে বাংলাদেশের অনেক পণ্যের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগকারীদের আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প উদ্যান এবং উচ্চ প্রযুক্তি পার্কগুলিতে আরও বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনমূলক সুযোগগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিক্ষেত্রে বিশেষত ধান চাষ ও মিঠা পানির মৎস্য চাষে তার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে বাংলাদেশ খুশি হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কা থেকে উপকূলীয়, অ্যাকুয়া কালচার, সামুদ্রিক সম্পদ চর্চা এবং গভীর সমুদ্রের মাছ ধরার প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে চাই।’

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং দক্ষ উন্নয়নে আরও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা থাকা উচিত। স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে তিনি শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশী নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা পেশাজীবীদের মূল প্রশিক্ষণের উপর জোর দেন।

আমাদের বিশ্বমানের ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এবং চিকিৎসা ডিভাইসগুলি প্রচুর পরিমাণে আমদানির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা ব্যাপক উপকৃত হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য শ্রীলঙ্কার নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণের প্রয়োজন হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আইসিটির ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের উচ্চ দক্ষতাও কাজে লাগাতে পারে।

তিনি আরও বলেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমন বিষয়ে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ খুশি হবে।
ইহসানুল করিম বলেন, শেখ হাসিনা তার সমাপনী বক্তব্যে এই বৈঠকে ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেছেন এবং সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যন্ত স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় ঐকমত্যের দলিলপত্রের বিষয়ে উভয় পক্ষের উচিত যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া।

শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশ তার সম্পর্কের মূল্যায়ন করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পঞ্চাশতম বার্ষিকী আগামী বছরে অনুষ্ঠিত হবে।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সম্পর্ককে বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠ বন্ধন হিসোব উল্লেখ করেন। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজা পাকসে আগামী বছর শ্রীলংকা সফরের আমন্ত্রণ জানান।

রাজা পাকসে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপান্তর ও এর সক্ষমতার প্রশংসা করে বলেন, পারস্পরিক সুবিধার জন্য তারা কৃষিক্ষেত্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিষয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে নিতে পারলে আনন্দিত হবে।

বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং এর বহুমুখীকরণের উপর জোর দিয়ে তিনি শুল্ক ব্যবস্থায় আরও বেশি মনোযোগ চান এবং বলেন যে, তার দেশ বেসরকারি খাতের ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করবে এবং এ ব্যাপারে মুনাফা নিজ দেশে প্রেরণের পদ্ধতি সহজ করার জন্যও তিনি বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি নীল অর্থনীতির বিষয়ে বাংলাদেশের ধারণারও প্রশংসা করেন এবং বলেন যে শ্রীলঙ্কা তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে এই লক্ষ্যে প্রস্তুত রয়েছে।

শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের কাছ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থ্পনার বিষয়ে শিখতে আগ্রহী। তিনি কোভিড-১৯ পিরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলায় বাংলাদেশ এবং এর প্রধানমন্ত্রীর ভ’মিকার প্রশংসা করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো.শাহরিয়ার আলম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস,পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ কিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

অন্যদিকে শ্রীলংকার শিক্ষা মন্ত্রী জিএল পেইরিস, পল্লী আবাসন ও নির্মাণ ও বিল্ডিং উপকরণ শিল্প মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ইন্দিকা অনুরাধা, বাটিক, হ্যান্ডলুম ফ্যাব্রিক এবং স্থানীয় পোশাক পণ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দয়াশ্রী জয়সেকেরা, অর্থ ও মূলধনের বাজার

এবং রাজ্য এন্টারপ্রাইজ সংস্কার মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী আজিথ নিভ্রাদ কাবরাল,আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী থারাকা বালাসুরিয়া, প্রধানমন্ত্রীর সচিব গামিনি সেদারা সেনার্থ শ্রীলংকার পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Pin It