ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠকের মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে রোমের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন কোঁতে।
বুধবার রোমে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন পালাজ্জো সিগিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কোঁতে এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে ঢাকা ও রোম বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে ইতালি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বর্তমান সহযোগিতার অতিরিক্ত আরও ১০ লাখ ইউরো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। খবর বাসস ও ইউএনবির।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, প্রায় এক ঘণ্টার এ বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থানে উভয় নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনাকালে কোঁতে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনাকে তিনি বলেন, ”১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার আপনার ‘সুপার হিউম্যান’ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।”
এ প্রসঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য বর্তমান সহায়তার অতিরিক্ত আরও ১০ লাখ ইউরো দেবে। এ সহায়তা ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে দেওয়া হবে।
এ সময় শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশনা মেনে চলতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে ইতালিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। ইতালিকে বাংলাদেশের মহান বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর তাৎক্ষণিকভাবে যে ক’টি ইউরোপীয় দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় তার মধ্যে ইতালি অন্যতম। তার এ সফরের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বলেন, তার দেশ অনেক পণ্য দিতে সক্ষম। তিনি বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করেন। ইতালিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদেরও প্রশংসা করেন কোঁতে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী হলি আর্টিসানে হামলায় নিহত তার দেশের নাগরিকদের সহায়তার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। তিনি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী পালনের কথাও জানান।
শেখ হাসিনা ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে কোঁতেকে অবহিত করেন তিনি। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ‘বিজনেস ভিসা’ দেওয়ারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি ইতালির ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালাজ্জো চিগিতে পৌঁছলে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার উপস্থিত ছিলেন।