ঢাবি ছাত্রীর ধর্ষণ মামলায় নূরের দুই সহকর্মী কারাগারে

Court_A+Pramanik_091014_0035

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার মামলায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. নাজমুল হুদাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

দুই দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার তাদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে আসামিদের জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জামিন আবেদনের শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এ দুই আসামি সম্পর্কে রিমান্ড ফেরতের আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা তেমন নতুন কোনো কিছূ বলেননি। সব বক্তব্যই গতানুগতিক।”

তিনি বলেন, মামলায় ধর্ষণের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তাদের একজন হাসান আল মামুনের কথায় এই দুইজন ‘শুধু প্রচারণা চালিয়েছিল’।

“আসামি সাইফুল বা নাজমুলের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে কোনো কথা নেই। হাসান আল মামুনের বাসায় স্বেচ্ছায় ওই নারী শিক্ষার্থী গিয়েছিলেন। তাদের সম্পর্ক ব্রেকআপের পর এ ঘটনা ও মামলা। বহু বছর আগের মৃত একটি ঘটনা উদ্দেশ্যমূলকভাবে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে।”

তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হীরন বলেন, “ফৌজদারি অভিযোগের কোনো ‘টাইম বার’ নেই। ১০০ বছর পরও অভিযোগ তোলা আইন সম্মত, বৈধ।”

গত ২৩ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রীর দায়ের করা মামলায় গত ১১ অক্টোবর সাইফুল ও নাজমুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

ডাকসুর সাবেক ভিডি নুরুল হক নূরের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল এবং সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি মো. নাজমুল হুদা।

গ্রেপ্তারের পরদিন সোমবার দুজনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর করা মামলায় চার নম্বর আসামি মো. সাইফুল ইসলাম এবং পাঁচ নম্বর আসামি মো. নাজমুল হুদা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সাথে বাদীর পরিচয় থেকে ‘সুসম্পর্ক’ গড়ে ওঠে। গত ৩ জানুয়ারি বাদীকে হাসান আল মামুন তার লালবাগের নিয়ে ‘ধর্ষণ করেন। এর পরদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন বাদী। তখন মামলার আরেক আসামি নাজমুল হাসান সোহাগের সহায়তায় ১২ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসান আল মামুন আত্মগোপনে চলে যান। হাসান আল মামুনের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবে বলে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে নাজমুল হাসান সোহাগ বাদীকে নিয়ে কোতোয়ালি থানার ৫৬৩/৫৬৬ মিউনিসিপাল হকার্স মার্কেট সদরঘাট হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে নিয়া যান। সেখানে বাদীকে নাশতা করান।

এরপর সোহাগ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে লঞ্চে করে বাদীকে চাঁদপুর নিয়ে যান। চাঁদপুর পৌঁছানোর পর হাসান আল মামুনকে দেখতে না পেয়ে বাদীর সন্দেহ হয়। তখন সোহাগকে দ্রুত ঢাকায় ফেরার জন্য বলেন বাদী। সোহাগ বাদীকে নিয়ে বিকেলে লঞ্চের কেবিনে অবস্থান করেন। পরে বাদীকে ‘ধর্ষণ করেন’ তিনি। এ সময় বাদী কান্নাকাটি করলে সোহাগ তাকে নষ্ট মেয়ে বলে ভয়ভীতি দেখান এবং কান্না করে লাভ হবে না বলেন জানান।

গত ২৯ মে বাদীকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য বিভিন্ন নামে ভুয়া ফেইসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন গ্রুপে মেয়েটির মোবাইল নম্বর ছড়িয়ে দেন সোহাগ। বাদী এ বিষয়ে ২০ জুন নুরুল হক নূরকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানান। পরে নূর বাদীকে তার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করে দেবে বলে আশ্বস্ত করেন। গত ২৪ জুন নুরুল হক নূর বাদীকে নীলক্ষেতে দেখা করতে বলেন। সেখানে নূর তাকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন এবং বাড়াবাড়ি করলে তার লোকদের দিয়ে বাদীর নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করবে এবং বাদীকে ‘পতিতা’ বলে প্রচারের হুমকি দেন।

Pin It