বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্ত যেন ‘প্রভাবিত না হয়’ সেজন্যই মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মঙ্গলবার সংসদে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে কাজ চলছে। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে যখনই কোনো অগ্রগতি হবে তা সংসদকে জানানো হবে।
জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু গত ৪ ফেব্রুয়ারি ৩০০ বিধিতে সংসদে রিজার্ভ চুরি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন।
রিজার্ভ চুরির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী তার বিবৃতিতে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ‘অপব্যবহার করে আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের মাধ্যমে’ বাংলাদেশের রিজার্ভের একটি অংশ পাচার করা হয়।
“রিজার্ভ চুরির বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকার চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধার, চুরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যৎ চুরি রোধে সম্ভব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়।
“তিনি দ্রুততার সাথে সরকারকে রিপোর্টও প্রদান করেন। পাশাপাশি পুলিশের তদন্ত বিভাগকে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিআইডির তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে। যে কারণে ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টটি ফৌজদারী তদন্ত কার্যক্রমে যাতে কোনো প্রভাব না ফেলে, তার জন্য প্রকাশ করা হয়নি।”
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকে।
ওই অর্থ স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোতে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে ফিলিপিন্স সরকার বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার হয়নি।
ওই অর্থ উদ্ধারের আশায় নিউ ইয়র্কের আদালতে সম্প্রতি একটি মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলা পরিচলানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্ম কোজেন ও’কনরকে।
আদালতে মামলা করার জন্য ইতোমধ্যে তিন কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল।
ওই বছর মার্চ মাসে সরকারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে।
ওই বছর ৩০ মে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ফরাসউদ্দিন রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রতিবেদনে যা আছে, তা অবশ্যই প্রকাশ করা হবে। গত দশম সংসদে বিভিন্ন সময়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার সংসদে বলেন, “রিজার্ভ চুরির বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। এর সঙ্গে অনেক দেশ জড়িত আছে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই ও ফিলিপিন্স সরকার তদন্তে নামে।
“এর ধারাবাহিকতায় শ্রীলঙ্কা হতে ২০ মিলিয়ন ও ফিলিপাইন হতে ১৪ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা হয়েছে। বাকি ৬৬ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ডলার উদ্ধারে কার্যক্রম চলমান আছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আমরা মামলা করেছি।”
সেই মামলা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ‘যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণাদি’ পেয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “চুরি যাওয়া রিজার্ভ উদ্ধারে কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে যখনই কোনো অগ্রগতি হবে, তা সংসদকে অবহিত করা হবে।”