সঙ্গী টানা চারটি হারের ক্ষত। সম্বল ১২৮ রান। ভরসা ছিল কেবল উইকেট, দ্রুত রান তোলা যেখানে বেশ কঠিন। উইকেটের সেই সাহায্য দারুণভাবে কাজে লাগালেন বোলাররা। তাইজুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহর স্পিন হয়ে উঠল দুর্বোধ্য। পঞ্চম ম্যাচে এসে প্রথম জয়ের দেখা পেল খুলনা টাইটানস।
বিপিএলের সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার রাজশাহী কিংসকে ২৫ রানে হারিয়েছে খুলনা টাইটানস। পাঁচ ম্যাচে রাজশাহীর এটি তৃতীয় হার।
বিপিএলের সিলেট পর্বে ব্যাটিং উইকেট ও রান উৎসবের আশায় ছিলেন অনেকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে উইকেট বেশ মন্থর। গ্রিপ করল, টার্ন মিলল। বল নিচুও হলো প্রায়ই। তাতে ধুঁকল দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই। উইকেটের চরিত্র বুঝে ব্যাট করতে পারেনি কোনো দলই। খুলনা যতটা বাজে ব্যাট করেছে, রাজশাহী করেছে তার চেয়েও বাজে। খুলনার ১২৮ রান তাড়ায় রাজশাহী শেষ ১০৩ রানেই।
উইকেট যে সহজ নয়, ফুটে ওঠে ম্যাচের প্রথমভাগেই। মুস্তাফিজুর রহমানের বল গ্রিপ করেছে অনেক, বেশ কিছু কাটার স্পিনারদের মতো যেন টার্ন করেছে। রাজশাহীর দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও আরাফাত সানিও উইকেটের সাহায্য কাজে লাগান দারুণভাবে। খুলনার ব্যাটিংয়েও ছিল না পাল্টা জবাব দেওয়ার ধার।
পল স্টার্লিংকে বাইরে রেখে জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে জহুরুল ইসলামকে দিয়ে ইনিংস শুরু করে খুলনা। কিন্তু নতুন জুটিও ভাঙে দ্রুতই। একটি ছক্কা ও চারে ৬ বলে ১৩ করে ফেরেন জহুরুল।
একই পথে হেঁটেছেন জুনায়েদও, বিদায় নেন একটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ রান করে। তিনে নামা ডাভিড মালান কিছুক্ষণ টিকলেও গতি পাননি। আউট হয়েছেন বাজে শটে। মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ, নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যর্থ আবারও।
কার্লোস ব্র্যাথওয়েট পারেননি ঝড় তুলতে। ৮ রান করেছেন ১২ বলে। আরিফুল হক একটা পাশ আটকে রেখে দলকে গিয়ে গেছেন লড়ার মতো রানে। শেষ ওভারে আউট হওয়া আরিফুল করেছেন ২৭ বলে ২৬ রান।
রান তাড়ায় রাজশাহী ধুঁকেছে শুরু থেকেই। লরি ইভান্সকে ওপেনিংয়ে তুলে এনেও লাভ হয়নি। ইংলিশ ব্যাটসম্যান ফিরে যান শূন্য রানেই।
মাহমুদউল্লাহর অনেক নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে খুব বেশি কিছু করার ছিল না মুমিনুল হকের। সৌম্য সরকার ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন তাইজুলকে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে।
তিনে নামা মিরাজ দারুণ কিছু শটে রান বাড়িয়েছেন। কিন্তু ১৬ বলে ২৩ করে তিনিও আউট হয়েছেন তাইজুলের বলে বাজে শটে। রাজশাহীর রান তাড়া পথ হারায় পাওয়ার প্লের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে।
আগের ম্যাচে পরিস্থিতির দাবি মেটানো ব্যাটিংয়ে ম্যাচ সেরা জাকির হাসান করতে পারেননি সেটির পুনরাবৃত্তি। অভিজ্ঞ রায়ান টেন ডেসকাটের জন্য মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। কিন্তু দারুণ বোলিং করা তাইজুল ফিরিয়েছেন তাকেও।
রান তাড়ায় রাজশাহী জয়ের সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি কখনও। এমনকি অনিয়িমত বোলার ডেভিড মালানও ৪ ওভার বোলিং করেছেন, রাজশাহী পারেনি কাজে লাগাতে। শেষ দিকে আরাফাত সানি ও কামরুল ইসলাম রাব্বির দুটি ছক্কায় কোনো রকমকে তারা পেরুতে পারে একশ।
দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি খুলনার ক্যাচিংও ছিল ভালো। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট একাই ৪ ক্যাচ নিয়ে ছুঁয়েছেন বিপিএল রেকর্ড। প্রথম জয়ের স্বস্তিতে মাঠ ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইটানস: ২০ ওভারে ১২৮/৯ (জহুরুল ১৩, জুনায়েদ ১৪, মালান ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৯, শান্ত ১১, ব্র্যাথওয়েট ৮, আরিফুল ২৬, ভিসা ১৩, তাইজুল ০, শরিফুল ২*, জুনাইদ ১*; রাব্বি ৩-০-১৬-০, উদানা ৪-০-৩৬-২, মিরাজ ৪-০-২১-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২১-১, সানি ৪-০-২৫-২, সৌম্য ১-০-৬-০)।
রাজশাহী কিংস: ১৯.৫ ওভারে ১০৩ (মুমিনুল ৭, ইভান্স ০, মিরাজ ২৩, সৌম্য ২, ডেসকাট ১৩, জাকির ৭, ইয়োঙ্কার ১৫, উদানা ৬, সানি ১৫, রাব্বি ১৩, মুস্তাফিজ ০*; জুনাইদ ৩.৫-০-২৬-৩, ভিসা ৩-০-২৮-১, তাইজুল ৪-০-১০-৩, মাহমুদউল্লাহ ৪-১-১২-২, মালান ৪-০-২১-০, শরিফুল ১-০-৪-০)
ফল: খুলনা টাইটানস ২৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম