দুর্নীতিতে দণ্ডিত খালেদা জিয়ার মুক্তি যারা দাবি করছেন, তাদের এই অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, অনেকেই এখন বিএনপি নেত্রীর জন্য ‘মায়াকান্না’ করছেন, অথচ আন্দোলনের নামে নাশকতা এবং হত্যা-ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যারা স্বজন হারিয়েছেন-পঙ্গু হয়েছেন তাদের কথা তো কারও মনে পড়ে না।
“তাদের ব্যথা কি ব্যথা বলে মনে হয় না?,” প্রশ্ন রেখেছেন পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট বাবা-মাসহ পরিবারের অধিকাংশ স্বজনকে হারানো বঙ্গবন্ধুকন্যা।
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে রোববার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করে একদল সেনাসদস্য। সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান জাতির জনকের দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
ওই হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ চার সহকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ চার সংগঠক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যে ওই বছরের ৩ নভেম্বর রাতে কারাগারে ঢুকে এই চার নেতাকে হত্যা করা হয়।
এই নৃশংসতার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্তদের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। দশম সংসদ নির্বাচনেরর প্রথম বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি জোটের টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতালে নাশকতায় প্রাণহানির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তার (খালেদা জিয়া) নিজের বাসা গুলশান, অফিসও গুলশানে। গুলশানে বসে থেকে খালেদা জিয়া অসহযোগ আন্দোলন আর হরতাল। সেই অসহযোগ আন্দোলন কিন্তু এখনও তোলে নাই তারা। তাদের অবরোধও কিন্তু ওঠেনি। তাদের অবরোধ-হরতাল আর অগ্নিসন্ত্রাস।
“জীবন্ত মানুষগুলো, যার কোনো অপরাধ নাই তাদের পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করল। লঞ্চে আগুন, গাড়িতে আগুন, ট্রাকে আগুন, বাসে আগুন, ট্রেনে আগুন। কোন জায়গাটায় নাই আগুন? গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে, থামিয়ে ড্রাইভারকে টান দিয়ে নামিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন, সে জীবন ভিক্ষা চাচ্ছে তাকে ছাড়েনি। সিএনজি যাচ্ছে সিএনজিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে দিল ড্রাইভারকে বের হতেই দিল না।
“এই রকম বীভৎস ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। এত অন্যায়…এতো আল্লাহও সহ্য করে না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে। তার জন্য দেখি অনেকের মায়াকান্না। এই যে আগুনে পোড়া মানুষগুলো, এই যে ২০০১ এর পর আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর উপর অত্যাচার, নির্যাতন যারা এখনো পঙ্গু। গ্রেনেড হামলার স্প্লিন্টার নিয়ে যারা বেঁচে আছে। অনেকে মারা গিয়েছে। অনেকে অসহায় জীবন যাপন করছে, সেই ’৭৫ সাল থেকে যদি আপনারা ধরেন, যারা আমরা স্বজনহারা, বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি তাদের কথা কি কারও মনে পড়ে না? তাদের ব্যথা কি ব্যথা বলে মনে হয় না ?
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “খুনির স্ত্রী খুনি আবার ছেলেও তাই। সেটা আবার কি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সেই মামলা। আর দুর্নীতি তো আরও আছে। মামলায় হাজিরাই দেয় না, কোর্টেই যায় না। জানে যে কোর্টে এলেই তো চার্জশিট হয়ে যাবে, বিচার হলে সাজা একেবারে অবধারিত। ”
দুর্নীতিতে দণ্ডিত খালেদাপুত্র তারেক রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদেশে যে দুর্নীতি আমরা না, কিছু এফবিআইয়ের রিপোর্টে বের হয়েছে, সেই আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে তার ছেলে যে ঘুষ খেয়েছে। দুর্নীতি করেছে। সিঙ্গাপুর থেকে কিছু টাকা আমরা ফেরত আনতে পেরেছি মানিলন্ডারিং করেছিল তাদের জন্য এতটা মায়াকান্না তাদের চিকিৎসার চিন্তা!”
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে সাবেক সেনাপ্রধান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানকে কোনো দিন সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে দেননি, তাকে অপমানও করেছেন।
“একটার পর একটা অন্যায় তারা করে গেছে। শুধু খুনিদের উৎসাহিত করা না, একজন আহত মুক্তিযোদ্ধা, যাদের মহান ত্যাগে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার যারা করেছে তাদের জন্য এত কান্নাকাটি কাদের- আমার সেটাই ভাবতে অবাক লাগে।
বিএনপির অন্যান্য নেতাদের নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি: “একটা দল যার চেয়ারপরসন এতিমের টাতা আত্মসাতে জেলে। আবার ভারপ্রাপ্ত যাকে করল বাংলাদেশে এত নেতা থাকতে বিএনপি নেতার এতই অভাব হয়ে গেল যে, একজন নেতা পেল না যে আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও যে পলাতক, তাকে বানাল ভারপ্রাপ্ত। বিএনপির নেতৃত্বের এত অভাব?
“আমি জানি না যারা বিএনপি করে তাদের কোনো মেরুদণ্ড আছে কি না, সেটাই আমার সন্দেহ। তাদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ আছে কি না সেটাই আমার সন্দেহ, তারা আবার সেই মায়াকান্না কাঁদে।”
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভা সঞ্চালনা করেন। অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. নাসিম, আব্দুল মতিন খসরু, সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংবাদিক ও কলামনিস্ট আনিসুল হকসহ মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।