রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া লক্ষ্মীপুরের এ এইচ এম বিপ্লবের বিরুদ্ধে চাঁদার দাবিতে মারধরের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা শ্রমিক লীগের এক নেতা।
অন্যদিকে বিপ্লবের দাবি,ঠিকাদারী কাজের ‘নেগোসিয়েশনের’ ১০ লাখ টাকা মামুনের কাছে তার পাওনা। সেই টাকার জন্য তাকে ডেকে নিয়েছিলেন তিনি। কথা কাটাকাটির মধ্যে কেউ কেউ মামুনের গায়ে হাত তুললেও তিনি নিজে মারেননি।
লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে বিপ্লবের ফাঁসির রায় দিয়েছিল আদালত। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০১১ সালের এপ্রিলে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বিপ্লব।
আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহের ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি এই ফাঁসির আসামির প্রাণদণ্ড মওকুফ করে দেন। পরে শিবির নেতা এ এস এম মহসিন হত্যা মামলায় বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে দেন রাষ্ট্রপতি।
যাবজ্জীবন সাজা খাটার মধ্যেই ২০১৪ সালে লক্ষ্মীপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় টেলিফোনে বিয়ে করে আলোচনার জন্ম দেন তাহেরপুত্র বিপ্লব। সব মিলিয়ে সাড়ে সাত বছর কারাগারে কাটিয়ে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
রোববার বিকালে লক্ষ্মীপুরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে শ্রমিক লীগ নেতা মানুনুর রশিদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকালে লক্ষ্মীপুর শহরে যাওয়ার পথে তাকে ধরে তমিজ মার্কেট এলাকার পিংকি প্লাজায় নিয়ে যান বিপ্লব ও তার সহযোগীরা।
“তারা আমার কাছে ঈদ খরচের জন্য ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা জানালে আমাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারা হয়। পরে লোকজন জড়ো হলে আমাকে ছেড়ে দেয়। আহত অবস্থায় আমি সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই।”
মামুন বলেন, “র্মাডারের আসামি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্বরূপে ফিরছে। তার কারণে লক্ষ্মীপুরের সাধারণ মানুষ আজ আতঙ্কিত। আমি মামলা করেছি। লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসিসহ পুলিশ কর্মর্কতাদের আছে আমার আহ্বান, আপনারা সঠিকভাবে তদন্ত করুন।”
জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ ভূঁইয়া মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম ভুলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল, মাহবুব ইমতিয়াজ, জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক শেখ জামাল রিপন, বায়েজীদ ভূঁইয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল, সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন লোটাস এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
মামুন মারধরের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানে আবু তাহেরের ভাতিজা জুয়েল, আবদুল মান্নান, কীরণ, তানিম, হারুনুর রশিদ, পশ্চিম লক্ষ্মীপুরের পরান, স্টেডিয়াম রোডের শাহাদাত হোসেন ও অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা সবাই বিপ্লবের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
জেলা শ্রমিক লীগের আহ্ববায়ক ঠিকাদার মামুনুর রশিদের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুরের পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের ছেলে বিপ্লব কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের এলাকায় ‘ত্রাসের রাজত্ব’ কায়েম করেছেন। দাবি অনুযায়ী ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় দুদিন আগে তাকে মারধর করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর কারামুক্ত হওয়ার পর থেকে বিপ্লব বিভিন্ন ঠিকাদার-ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ‘চাঁদা আদায় করে’ আসছেন। বিপ্লবের লোকজন গত বুধবার রাতে পৌরসভার সাহাপুর এলাকায় মামুনের বাড়িতে গিয়ে ‘ঈদের খরচের’ নামে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে তাকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।
কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে টাকা না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে পিংকি প্লাজায় নিয়ে মারধর করা হয় বলে ঠিকাদার মামুনের অভিযোগ।
এদিকে বৃহস্পতিবারের ঘটনায় শ্রমিক লীগ নেতা মামুনসহ ৪ জনকে আসামি করে থানায় পাল্টা মামলা করেছেন বিপ্লবের সহযোগী হিসেবে পরিচিত আবদুল মান্নান।
মামুনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন, “তার কাছ থেকে ঠিকাদারী নেগোসিয়েশনের ১০ লাখ টাকা পাই আমি। ওই টাকা দিব দিচ্ছি বলেও সে দিচ্ছিল না। এ কারণে তাকে ডেকে আনা হয়েছিল।”
মারধরের অভিযোগের বিষয়ে বিপ্লব বলেন, “কথা কাটাকাটির মধ্যে কেউ গায়ে হাত দিতে পারে। আমি তাকে মারিনি।”
মামুনের অভিযোগ এবং প্ল্টাপাল্টি মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ওসি মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বলেন, “শ্রমিক লীগ নেতা মামুন বাদী হয়ে বিপ্লবসহ ২০ জনকে আসামি করে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। অপরদিকে মামুনসহ ৪ জনকে আসামি করে একটি এজাহার করেছেন আবদুল মান্নান। দুটি অভিযোগই আমাদের তদন্তনাধীন। তদন্ত করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
ভোক্তভুগির “কুত্তার লেজ হয় কি সোজা——- “