চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬৭১ কোটি ৩১ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, এ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে যে রেমিটেন্স এসেছে তা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট রেমিটেন্সের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
মহামারীর কঠিন সময়ে রেমিটেন্সের এই ধারায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের এই অবদান সঙ্কট মোকাবেলায় ‘সাহস’ যোগাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বর মাসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। আর এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত এক মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স পেল বাংলাদেশ।
এর আগে এই মহামারীর মধ্যেই গত জুলাই মাসে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জুলাইয়ের পর সেপ্টেম্বরেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স অবাক করার মতো। সবাই আশঙ্কা করেছিল, মহামারীর ধাক্বায় রেমিটেন্স একেবারে কমে যাবে। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো বেশি বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এতে মহামারী মোকাবেলা করা আমাদের সহজ হচ্ছে।”
মুস্তফা কামাল বলেন, এই রেমিটেন্সে দেশে লাখ লাখ পরিবার চলছে, ছোট ছোট ব্যবসা হচ্ছে। শেয়ার বাজার যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তাতেও রেমিটেন্সের অবদান আছে।
“আমার বিশ্বাস, রেমিটেন্স বৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কেননা, বৈধ পথে রেমিটেন্স আনতে আমরা গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছি। এছাড়া রেমিটেন্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে।”
চলতি অর্থবছর শেষে রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মূলত রেমিটেন্সের উপর ভর করেই আমাদের রিজার্ভে একটার পর একটা রেকর্ড হচ্ছে। এইতো কয়েক দিন আগে অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আকুর আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে গিয়েছিল। এখন তা ফের ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।”
ডিসেম্বরের মধ্যেই রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়াবে বলে অর্থমন্ত্রীর আশা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রেমিটেন্সে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা রেকর্ড। গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে এবার সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৪৫১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছিলেন ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। আর পুরো ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।
বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মত।
রিজার্ভ ফের ৩৯.৩ বিলিয়ন ডলার
গত ১ সেপ্টেম্বর অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে তা আরও বেড়ে ৩৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
এরপর ৭ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-অগাস্ট মাসের ১ বিলিয়ন ডলারের মত আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৯ বিলিরয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
রেমিটেন্সের উল্লম্ফনে ২০ সেপ্টেম্বর সেই রিজার্ভ ফের ৩৯ বিলিয়ন ডলারের উপরে ওঠে। বৃহস্পতিবার রিজার্ভে ছিল ৩৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুদ থাকতে হয়।