দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতে সিরিজ বাঁচিয়ে রাখল প্রোটিয়ারা।
রায়পুরের শহীদ ভির নারায়ণ সিং আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এতদিন ওয়ানডে ম্যাচ হয়েছিল একটিই। প্রায় তিন বছর আগের সেই ম্যাচে নিউ জিল্যান্ড গুটিয়ে গিয়েছিল স্রেফ ১০৮ রানে। সেই মাঠে এই সংস্করণে দ্বিতীয় ম্যাচে এবার বয়ে গেল রানের প্লাবন। সেঞ্চুরি হলো তিনটি। পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস আরও তিনটি। রান উৎসবের ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বুধবার গ্যালারির ৬০ হাজার দর্শকের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৪ উইকেটে। ৩৫৯ রানের লক্ষ্য চার বল হাতে রেখে পেরিয়ে যায় প্রোটিয়ারা।
এই দুই দলের মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচে প্রথমবার সাড়ে তিনশ বা এর বেশি রান তাড়ায় জিতল কেউ। আগের সর্বোচ্চ ৩০২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ভারত জিতেছিল সেই ২০০০ সালের মার্চে।
এবারের চেয়ে বেশি রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার জয় আছে দুটি।
ভারতের বিপক্ষে যেকোনো দলের যৌথভাবে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয় এটি। ২০১৯ সালে মোহালিতে ৩৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়াও জিতেছিল ৪ উইকেটে।
ভিরাট কোহলির টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, ভারতের জন্য কাজে এলো না কিছুই। রান তাড়ায় দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সুর বেঁধে দেন এইডেন মার্করাম। পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ম্যাথু ব্রিটস্কি ও ডেওয়াল্ড ব্রেভিস।
রাঁচিতে প্রথম ম্যাচে ৩৫০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নড়বড়ে শুরুর পর সম্ভাবনা জাগিয়েও ১৭ রানে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার আর হতাশ হতে হলো না সফরকারীদের।
সেদিনের ৬৮১ রান ছাড়িয়ে এই দুই দলের মধ্যে ওয়ানডে ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও হলো নতুন করে, ৭২০।
উইকেটে বোলারদের জন্য ছিল না কোনো সহায়তা। শিশিরের প্রভাবে ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে ব্যাটিং আরও সহজ হয়ে আসে। ভারতের বোলিং ছিল একেবারেই সাধারণ মানের। ফিল্ডিংও ছিল বাজে। ৫৩ রানে মার্করামের ক্যাচ ফেলেন ইয়াশাসভি জয়সওয়াল।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১০ চার ও ৪ ছক্কায় ৯৮ বলে ১১০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান মার্করাম।
ব্রিটস্কি করেন ৬৪ বলে ৬৮। ৫ ছক্কা ও এক চারে ৩৪ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তরুণ ব্যাটসম্যান ব্রেভিস।
ম্যাচের প্রথম ভাগে রেকর্ড সমৃদ্ধ করা ৫৩তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে কোহলি ৭ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৯৩ বলে ১০২, ১২ চার ও ২ ছক্কায় ৮৩ বলে ১০৫ রুতুরাজ।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা যদিও ভালো ছিল না। পঞ্চম ওভারে তারা হারায় কুইন্টন কি কককে। তবে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মার্করাম। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার (৪৮ বলে ৪৬) সঙ্গে ১০১ ও তৃতীয় উইকেটে ব্রিটস্কির সঙ্গে ৭০ রানের জুটিতে দলকে কক্ষপথে রাখেন তিনি।
৮৮ বলে সেঞ্চুরি করেন মার্করাম। ওয়ানডেতে ওপেনার হিসেবে ২৫ ইনিংসে তার প্রথম সেঞ্চুরি এটি। এই সংস্করণে তার আগের তিন সেঞ্চুরির সবকটি ছিল চার নম্বরে নেমে।
মার্করামকে ফিরিয়ে ভারত শিবিরে কিছুটা স্বস্তি ফেরান হার্শিত রানা। তবে সেই স্বস্তি উবে যায় ব্রেভিসের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। কুলদিপ ইয়াদাভকে ছক্কায় উড়িয়ে প্রথম ওয়ানডে ফিফটি করেন তিনি স্রেফ ৩৩ বলে। পরের বলেই তাকে ফিরিয়ে ৬৮ বলে ৯২ রানের বিস্ফোরক জুটি ভাঙেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার।
ব্রিটস্কিও পারেননি কাজ শেষ করে আসতে। পরপর দুই ওভারে তার ও মার্কো ইয়ানসেনের বিদায়ের একটু পর টনি ডি জর্জি হ্যামস্ট্রিংয়ে টানা লাগায় মাঠ ছাড়লে ভারত শিবিরে জাগে কিছুটা আশা। তবে কর্বিন বশ ও কেশাভ মহারাজের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকদের হতাশ করে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
শেষ ওভারে ৩ রানের প্রয়োজনে, প্রথম বলে দুই রান নেওয়ার পর চার মেরে ম্যাচের ইতি টেনে দেন বশ। ৪টি চারে ১৫ বলে ২৯ রানে অপরাজিত রয়ে যান তিনি।
শেষের মতো ভারতের জন্য ম্যাচের শুরুটাও ছিল হতাশার। ওয়ানডেতে তাদের টানা টস হারের রেকর্ড যাত্রা পৌঁছে যায় এদিন ২০ ম্যাচে।
ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লের মধ্যে তারা হারায় দুই ওপেনারকে। ৮ বলে ১৪ রান করেন রোহিত শার্মা। ২২ রান করতে জয়সওয়াল খেলেন ৩৮ বল।
এরপরই তৃতীয় উইকেটে ১৯৫ রানের জুটিতে দলের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন কোহলি ও রুতুরাজ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে যেকোনো উইকেটে ভারতের সর্বোচ্চ জুটি এটি। ২০১০ সালে দ্বিতীয় উইকেটে সাচিন টেন্ডুলকার ও দিনেশ কার্তিকের ১৯৪ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড।
আগের ম্যাচ যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু করেন কোহলি। লুঙ্গি এনগিডিকে ছক্কায় উড়িয়ে প্রথম রানের দেখা পান তিনি।
রুতুরাজের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ হলেও ভারতের হয়ে ওয়ানডে খেলার সুযোগ খুব একটা তিনি পান না। এই সিরিজের আগে যেমন খেলতে পারেন মোটে ৬ ম্যাচ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে অল্পে আউট হলেও এদিন দারুণ সব শটের পসরা মেলে ধরে এগিয়ে যান ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
৫২ বলে পঞ্চাশে পা রাখা রুতুরাজ পরের ২৫ বলেই পৌঁছে যান তিন অঙ্কের ঘরে। বশকে পরপর চমৎকার দুটি বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
রুতুরাজের বিদায়ের এক ওভার পর কোহলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮৩ নম্বর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯০ বলে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে তার টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি। ৩৭ বছর বয়সী তারকাও আউট হয়ে যান সেঞ্চুরির পরপরই।
ওয়াশিংটন সুন্দারের দ্রুত বিদায়ের পর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লোকেশ রাহুল (৪৩ বলে ৬৬*) ও রাভিন্দ্রা জাদেজার (২৭ বলে ২৪*) ৫৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানের জুটিতে সাড়ে তিনশ ছাড়ায় ভারতের স্কোর। কিন্তু এত বড় পুঁজি নিয়েও লড়াই জমাতে পারল না তারা।
আগামী শনিবার শেষ ম্যাচে হবে সিরিজের ফয়সালা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৫৮/৫ (জয়সওয়াল ২২, রোহিত ১৪, কোহলি ১০২, রুতুরাজ ১০৫, রাহুল ৬৬*, ওয়াশিংটন ১, জাদেজা ২৪*; বার্গার ৬.১-০-৪৩-১, এনগিডি ১০-১-৫১-১, ইয়ানসেন ১০-০-৬৩-২, মহারাজ ১০-০-৭০-০, বশ ৮-০-৭৯-০, মার্করাম ৫.৫-০-৪৮-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.২ ওভারে ৩৬২/৬ (মার্করাম ১১০, ডি কক ৮, বাভুমা ৪৬, ব্রিটস্কি ৬৮, ব্রেভিস ৫৪, ডি জর্জি ১৭ আহত অবসর, ইয়ানসেন ২, বশ ২৯*, মহারাজ ১০*; আর্শদিপ ১০-১-৫৪-২, হার্শিত ১০-০-৭০-১, প্রাসিধ ৮.২-১-৮৫-২, ওয়াশিংটন ৪-০-২৮-০, জাদেজা ৭-০-৪১-০, কুলদিপ ১০-০-৭৮-১)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুটির পর ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: এইডেন মার্করাম





