তিস্তা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে ভারতের সংসদীয় কমিটির সুপারিশে আশাবাদী হওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দুই যুগ পর বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে তিস্তা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে নয়া দিল্লি সরকারকে পরামর্শ দিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অনিষ্পন্ন এবং বহু কাঙ্ক্ষিত এই চুক্তি সম্পাদনে ভারতের পার্লামেন্টারি কমিটির এই তাগিদে কাজ করতে নয়া দিল্লি বাধ্য না হলেও এই সুপারিশকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন দুই দেশেরই বিশ্লেষকরা।
শুধু বাংলাদেশেই যে নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তা নয়, আগামী বছর ভারতেও সাধারণ নির্বাচন। তার আগে এই সুপারিশে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা সদস্য, যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিতে বিজেপি-তৃণমূল যোগাযোগের ইঙ্গিতও পাচ্ছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ভারতের সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির সুপারিশে।
একে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “তাদের সংসদীয় কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে, পরবর্তী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হবে।”
ভারতের লোকসভার বিদেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি গত ২৫ জুলাই লোকসভার অধিবেশনে ‘ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন জমা দেয়।
ক্ষমতাসীন বিজিপির পার্লামেন্ট সদস্য পি পি চৌধুরী নেতৃত্বাধীন এই কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরোধিতার কারণে ২০১১ সালে শেষ মুহূর্তে আটকে যায় তিস্তা চুক্তি।
যেভাবে লাগে গেরো
ভারতে তখন কেন্দ্রে সরকারে কংগ্রেস, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তার ঢাকা সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল।
সেই সফরের আগে দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই চুক্তির বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছিল। চুক্তির নথিও চূড়ান্ত করে ফেলেছিল ঢাকা ও নয়া দিল্লি।
বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলে সেচের জন্য তিস্তার পানি গুরুত্বপূর্ণ বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিন্ন এই নদীর পানি বণ্টন চুক্তির মাধ্যমে জলপ্রবাহের ন্যায্য হিস্যা পেতে বাংলাদেশ ছিল আগ্রহী।
সেই শীর্ষবৈঠকে মনমোহনের সঙ্গে মমতারও ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি না আসায় গুঞ্জন ছড়ায়, তারপর দেখা গেল তিস্তা চুক্তি আর হয়নি।
২০১১ সালে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিং। ওই বৈঠকেই তিস্তা চুক্তি সইয়ের কথা ছিল, তবে হয়নি
এক সময়ের কংগ্রেস নেত্রী মমতা আলাদা দল গড়ার পর ২০০৪ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়লেও পরে কংগ্রেসের জোটে ভিড়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও হন ২০১১ সালে।
তবে তারপর থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে নানা বিষয়ে তার মতবিরোধ চলছিল। মনমোহনের ওই সফরের পরের বছরই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট থেকে বেরিয়ে আসেন মমতা।
তিস্তা চুক্তিতে আপত্তির ক্ষেত্রে মমতা যুক্তি দেখান, বাংলাদেশকে পানি দিলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ভাগে পানি কম পড়বে।
এরপর ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় এলেও তিস্তা চুক্তি নিয়ে হেলদোল হয়নি। নরেন্দ্র মোদী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস এলেও তা কাগজে-কলমে আর এগোয়নি।
এবার এমন একটা সময়ে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন এল, যখন দেশটির আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর ভোট আর জোটের হিসাব-নিকাশ আবার শুরু হয়েছে।
এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসাবে আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ; অগ্রসরমান অর্থনৈতিক দেশগুলোর এই জোটের শীর্ষ সম্মেলন যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘ইতিবাচক’
তিস্তা চুক্তিকে মন্ত্রিসভায় না নিয়ে শুরুতে সংসদীয় কমিটিতে নিয়ে আসাটাকে ভারত সরকারের ‘সদিচ্ছার প্রকাশ’ হিসাবে দেখছেন ভারতীয় সাংবাদিক, বিশ্লেষক জয়ন্ত ঘোষাল।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, সরকারও এটাকে নতুন করে পুনর্জীবিত করতে চাইছে। শুরুতে কেবিনেটে নিয়ে আসলে খারিজ করে দেওয়া হতে পারে।
“একবার যেহেতু তিস্তার বিরোধিতা হয়েছে, সেহেতু এখন অনেক বেশি সাবধানে পা ফেলতে চাইছে সরকার। সেক্ষেত্রে আগে যদি সংসদীয় কমিটিতে বিষয়টা আলোচনা হয়, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান কিন্তু বিজিপির হাতে, সেই বিজিপির হাতে যেহেতু বিদেশমন্ত্রক রয়েছে, সেহেতু কী প্রস্তাব হবে, কী প্রস্তাব হবে না, সেখানে বিজিপির একটা ভূমিকা আছে।”
এক সময় আনন্দবাজার পত্রিকার দিল্লি সম্পাদক ছিলেন বর্তমানে ইন্ডিয়া টুডে আজতাক গ্রুপের কনসাল্টিং এডিটর জয়ন্ত ঘোষাল। ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের যে ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে সফরসঙ্গীদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক কমিটির সদস্য হওয়ায় ওই প্রতিবেদনের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে জয়ন্ত ঘোষাল বলেন, “স্টান্ডিং কমিটির রিপোর্ট দেখে তো মনে হচ্ছে, তাদের ইচ্ছার প্রকাশ। এবং স্টান্ডিং কমিটির রিপোর্ট এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথেও একটা কোথাও আলাপ আলোচনার যোগসূত্র তৈরি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
“সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যয় ’হ্যাঁ’ বলেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি একটা নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে দিত, তাহলে তো স্টান্ডিং কমিটি এই সুপারিশটা করতে পারত না।”
এই কারণে নতুন উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিক থেকে কোনো ‘ইতিবাচক আশ্বাস’ কেন্দ্র পেয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন ভারতের এই সাংবাদিক।
তিনি বলেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তি করতে চাইলেও মমতাকে মানিয়েই তা করতে হবে।
“সুতরাং এটা সত্যি সত্যি তারা (কেন্দ্রীয় সরকার) ইনিশিয়েটিভ নেয়, তাহলে সবথেকে কার্যকর সমাধানসূত্র হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে পরে আলোচনা হবে, আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে কেন্দ্র সরকারের একটা বৈঠক হোক। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীকে সম্পৃক্ত করা হোক।”
তিস্তা নদী হিমালয় থেকে উৎপত্তির পর ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিলেছে। বাংলাদেশের উজানে তিস্তায় গজলডোবা ব্যারেজ করায় পানি প্রত্যাহারের সুযোগ পাচ্ছে ভারত। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে কম।
ভারতের সংসদীয় কমিটির সুপারিশে জয়ন্ত ঘোষাল গুরুত্ব দিলেও ততটা আশাবাদী হতে পারছেন না বাংলাদেশের কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, “পার্লামেন্টারি কমিটির রিপোর্ট তো বাধ্যবাধকতা নাই, কাজে তারা যদি এটাকে শুধু টেকনিক্যাল রিকমেন্ডেশান হিসাবে দেখেন, তাহলে আমার মনে হয় খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।”
তবে তিনি মনে করেন, মোদী সরকার এখন রাজনৈতিক কারণে তিস্তা চুক্তি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে প্রতিবেদনটি ইতিবাচকভাবে কাজে লাগতে পারে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির তিস্তার সঙ্গে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়টি দেখিয়ে বলেন, “সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের আগে তারা এ ধরনের রিস্ক নেবেন কি না, এটাও কিন্তু একটা প্রশ্ন এবং জবাব আমাদের কাছে নাই।
“মোদীবিরোধী জাতীয় পর্যায়ে যে মোর্চা তৈরি হচ্ছে, তাতেও কিন্তু মমতা ব্যানার্জি সদস্য হিসাবে আছেন। কাজেই এই প্রেক্ষাপটে এখন মোদী সরকার যদি এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো কথা হবে, আমরা খুব খুশি হব, কারণ আমরা এক দশক ধরে অপেক্ষায় আছি, কবে এটার সমাধান হবে।”
২০১১ সালে যে কাঠামোটি হয়েছিল, তা ধরেই চুক্তির পক্ষপাতি বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, “হবে কি না, এই প্রক্রিয়া উত্তরণের মতো রাজনৈতিক পুঁজি মোদী সরকারের হাতে আছে কি না, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে জায়গায় সহযোগিতা করবে কি না, সেগুলো আমরা এখনও জানি না। আমি চিন্তা করছি বিচার্য বিষয় হিসাবে, এটাকে নেতিবাচক বিষয় হিসাবে দেখছি না।”
‘আশাব্যঞ্জক’
ভারতের সংসদীয় কমিটির ওই প্রতিবেদনকে অবশ্যই ‘আশাব্যাঞ্জক এবং তাৎপর্যপূর্ণ’ বলছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন বলেন, “বিশেষ করে এই সংসদীয় কমিটিতে বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেসসহ ভারতের সব রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যরা আছেন। তাই এ ধরনের একটি সুপারিশ আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
“এই সুপারিশকে উদ্ধৃত করে বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আগামী দিনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে বলে আমরা আশা করি।”
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিও ওই সংসদীয় কমিটিতে থাকার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “আমরা এটাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
“ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির দীর্ঘ অমীমাংসিত বিষয় সম্পর্কে কমিটি অবগত এবং কমিটি চায় বাংলাদেশের সঙ্গে আরও উন্নত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর সম্পন্ন করা হোক।”
“মতৈক্যে পৌঁছার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত কার্যকর আলোচনা শুরুর জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানাচ্ছে এবং এর অগ্রগতি বা ফলাফল কমিটিকে জানানো যেতে পারে,” বলেন তিনি।
চিঠির জবাব আসেনি
তিস্তা নদী থেকে পানি প্রত্যাহারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন দুই খাল খননের উদ্যোগের খবর সংবাদ মাধ্যমে দেখে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে ভারতকে গত মার্চে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার।
সাড়ে চার মাসের মাথায়ও ওই চিঠির জবাব আসেনি বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে চিঠির জবাব পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ওটার ব্যাপারে তারা কাজ করছে এবং তারা জানাবে।”
মধ্য মার্চে ভারতের ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য প্রায় এক হাজার একর জমির মালিকানা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে।
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি যেখানে ঝুলে আছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এমন উদ্যোগের ফল কী হতে পারে, সেই প্রশ্নও রাখা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
এর কয়েকদিন পর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছিলেন, ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক জানতে ভারতকে নোট ভার্বাল (কূটনীতিকপত্র) পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেপা চুক্তি ও এলওসি প্রসঙ্গ
‘ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে নানা রকম সুপারিশ তুলে ধরে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
ব্যবসায় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (সেপা) দ্রুত সময়ে চূড়ান্ত করার সুপারিশ প্রতিবেদনে করেছে কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই চুক্তির বিষয়ে জয়েন্ট স্টাডি রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং ‘দ্রুত সময়ে’ আলাপ-আলোচনা শুরু হবে।
“তাই কমিটি চায়, কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (সেপা) দ্রুত সময়ে চূড়ান্ত হোক এবং একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে বাস্তবায়নের জন্য আলাপ-আলোচনাও সেভাবে শুরু হয়।”
নতুন ও ক্রমবর্ধমান খাতে সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দুদেশের উদ্যোগের ক্ষেত্রে পরিবেশ, জলবায়ু, সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, মহাকাশ, সবুজ জ্বালানি এবং সুনীল অর্থনীতিকে বিবেচনার কথা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার হিসাবে ভারত বাংলাদেশকে ১ হাজার কোটি ডলারের সহজ শর্তের ঋণ দিয়েছে। যার মধ্যে ৭৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার হচ্ছে তিনটি ঋণচুক্তির আওতায়। আরেকটি ঋণচুক্তির আওতায় ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হচ্ছে প্রতিরক্ষা খাতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এলওসি’র আওতায় নেওয়া ৪২ প্রকল্পের মধ্যে ১৪টি ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। এর বাইরে ৮টি বাস্তবায়নাধীন, ৭টি দরপত্র এবং ১৩টি প্রস্তুতি পর্যায়ে।
এর বাইরে ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশে ছাত্রাবাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ ৭৪টি হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট নেওয়ার কথা তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
ভারতের ঋণে বাংলাদেশে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সময়মত শেষ করার উদ্যোগ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
ঋণচুক্তির আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলোর সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, “এসব প্রকল্পের সময়মত ও কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন অংশীদারত্বের সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে কমিটি।
“তাই, ঋণচুক্তির আওতাসহ অন্য সব প্রকল্প যাতে সময়মত শেষ হয়, সেজন্য নিয়মিত ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কমিটি মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানাচ্ছে।”
২০১৫ সালে স্থলসীমান্ত চু্ক্তির মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময়ের ধারাবাহিকতায় অনুপ্রবেশ, আন্তঃসীমান্ত চোরাচালান বন্ধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।