চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রথম এই ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি প্রশ্নে কোনো অগ্রগতি হয় কি-না সেটা জানতে বরাবরের মতোই আগ্রহী মানুষ।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত ও বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিস্তা নিয়ে এখনই কোনো চুক্তি না হলেও ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা হতে পারে। আর এই সমঝোতাই ভবিষ্যতে তিস্তা চুক্তির ভিত তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সিকিমের পাওহুনরি হিমবাহে উৎপত্তির পর প্রায় দুইশ’ মাইল পথ বেয়ে তিস্তা নদী ব্রহ্মপুত্রে গিয়ে মিশেছে বাংলাদেশের ভেতর। এই নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহু বছরের যে জটিলতা, তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে দিল্লির সাম্প্রতিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো।
এ বিষয়ে বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা বহুদিনের দাবি ৫৪টি অভিন্ন নদী নিয়েই একটা সর্বাত্মক চুক্তি হোক। আমার ধারণা এবার সে ব্যাপারে ভারত নীতিগতভাবে রাজি হবে, যাতে এসব নদীগুলোকে কভার করে সেগুলোর বেসিন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে একটা সমঝোতা সম্ভব হয়। আলাদা করে প্রতিটি নদী নিয়ে হয়তো এখনই কিছু হবে না, তবে তিস্তাসহ সবগুলো নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এমন একটা ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো কিন্তু হতে পারে বলেই আমরা শুনতে পাচ্ছি।’
এদিকে কিছুদিন আগেই দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়। আড়াই বছর পর দু’জনের প্রথম সাক্ষাতে তিস্তা চুক্তির প্রশ্নে মমতা ব্যানার্জি কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছেন বলেই ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। এছাড়া ভারতে তিস্তার আরেক অংশীদার রাজ্য সিকিমের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও সম্প্রতি বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আগস্টেই ভারতের পানিসম্পদ সচিব ঢাকায় গিয়েছিলেন। তখনই কিন্তু আমরা আলোচনা করেছি– শুধু তিস্তা নয়, ৫৪টি অভিন্ন নদী নিয়েই আসলে আমাদের এখন কিছু একটা করা দরকার। এই সবগুলো নদীতেই পলি জমেছে, নাব্যতা কমছে। পাশাপাশি বন্যা আর খরা দু’রকম সমস্যাতেই আমাদের ভুগতে হচ্ছে। ফলে আমরা এখন এই নদী অববাহিকাগুলোর যৌথ ব্যবস্থাপনার ভাবনা নিয়েই এগোতে চাচ্ছি। খরার মাসগুলোতে তিস্তার পানি আমরা কীভাবে ভাগাভাগি করতে পারি, সেটা সেই বৃহত্তর পরিকল্পনারই একটা অংশ।’
ভারতীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ বিশ্লেষক জয়িতা ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, “আসলে তিস্তার মতো একটা সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কোনও ‘ইউফোরিয়া’ বা আকাশচুম্বী প্রত্যাশা তৈরি হোক এটা ভারত বা বাংলাদেশ কেউই চায় না। কিন্তু তিস্তা নিয়ে ‘হাইপ’ এড়িয়ে যেতে চাইলেও জলসম্পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু অ্যাড্রেস করার ব্যাপারে দু’পক্ষই যত্নবান। কাজেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী হওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে। এমনকি গত মাসেই ঢাকা সফরে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও বলে এসেছেন তিস্তার ইস্যুটা তারা দেখছেন।”
ভারত ও বাংলাদেশ যদি সত্যিই এবার ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিসম্পদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনও সমঝোতায় পৌঁছতে পারে, সেটা ঢাকার জন্য একটা ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনতে পারে। কারণ সেক্ষেত্রে তিস্তার প্রবাহ নিয়ে ভারতীয় রাজ্যগুলো তাদের মর্জিমাফিক কিছু করতে পারবে না, একটা আন্তর্জাতিক ফ্রেমওয়ার্ক তাদের মেনে চলতে হবে। আর তিস্তার ভাঁটির দেশ বাংলাদেশের জন্য ভরসার কথা সেখানেই।