দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই কাকডাকা ভোরে তেল-পানির বোতল হাতে ছুটছেন শত শত মানুষ। শনিবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায়।
ছুটে চলা এসব মানুষের গন্তব্য ছিল পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চর পলাশ গ্রাম। উদ্দেশ্য, কথিত এক কবিরাজের তেল পড়া, পানি পড়া সংগ্রহ।
আর এই তেল-পানিতে ফুঁ দেওয়ার জন্য করা হয় রীতিমত এলাহি আয়োজন। মঞ্চ বানিয়ে, মাইক লাগিয়ে দেওয়া হয় তেল-পানি পড়া। এই তেল-পানিতে ফুঁ দেওয়ার কাজটি হয় মাইকে। শত শত আবালবৃদ্ধবনিতা তাদের নিয়ে আসা বোতলগুলো তুলে ধরলে কথিত কবিরাজ মাইক্রোফোনে ফুঁ দেন।
স্থানীয় বিশ্বাস, ‘কাঠুরিয়া কবিরাজ’ নামের এই কবিরাজের তেল-পানি পড়া ব্যবহারে রোগমুক্তি ছাড়াও পূর্ণ হবে নানা মনোবাসনা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার রাজ্য ইউনিয়নের পাইলাবর গ্রামের বাসিন্দা ওই কবিরাজ বনে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাই তার নাম ‘কাঠুরিয়া কবিরাজ’।
শনিবার পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের চর পলাশ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাতটার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ ফসলের পতিত বিশাল মাঠ। মাঠে নির্মিত মঞ্চ থেকে কবিরাজের অনুসারীরা বারবার তার আগমন বার্তা মাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলেন।
মঞ্চে থাকা পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেণু ও সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ টিটু উপস্থিত লোকজনকে শান্তিপূর্ণভাবে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে মাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলেন।
( এনিই সেই কথিত ‘কাঠুরিয়া কবিরাজ’ )
অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ১১টার দিকে ‘কাঠুরিয়া কবিরাজ’ আসেন মঞ্চে।তিনি সমাগতদের উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, “আমি মাইকে ফুঁ দেব। আর মাইকে সেই আওয়াজ যে পর্যন্ত যাবে, সে পর্যন্ত তেল-পানির বোতলে ফুঁ কাজ করবে।”
কবিরাজের কথা শুনে সমবেত শত শত মানুষে তেল-পানির বোতল উঁচিয়ে ধরলে কবিরাজ মাইকে ফুঁ দেন। রোগবালাই, মুসিবত দূর এবং মনোবাসনা পূরণের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরেন নর-নারীরা।
পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রেণু জানান, কিছু ভক্তের অনুরোধে এখানে কাঠুরিয়া কবিরাজের আগমন। বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
এদিকে কথিত কবিরাজের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে পুলিশও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা নেয়।
পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. মফিজুর রহমান বলেন, “খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে কবিরাজকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছি।”
এদিকে কথিত কবিরাজের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে প্রতারণা বলছেন স্থানীয় আলেম আল জামিয়াতুল ইমদাদীয়ার মোহাদ্দেস ও বড়বাজার শাহাবুদ্দিন ভূঁইয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
তিনি বলেন, “এভাবে ফুঁ দেওয়া শরীয়তের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং শিরক ও বেদাতের শামিল, যা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।”