ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন নাগরিক চূড়ান্তভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ তথ্য জানান। এবার সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১টি।
সিইসি বলেন, ইসির চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী পুরুষ ভোটার রয়েছেন ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং এক হাজার ২৩৪ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন।
এর আগে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, যারা ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন, তারা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
এবারই প্রথম এক বছরে তিনবার ভোটার তালিকা করেছে ইসি। এই ১২ কোটি ৭৬ লাখ ভোটার সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনের ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১টি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রায় এক বছর বয়সি নির্বাচন কমিশনের এটি হবে প্রথম ভোট। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই বছরের মধ্যে দেশে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার পর রাতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাধারণ মানুষ ভোট নিয়ে তাদের আশা, আকাঙ্খা ও সংশয়ের কথা বতুলে ধরেন।
শক্ত হবে নির্বাচন কমিশনকে
ঢাকা-১৯ আসনের ভোটার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানর কর্মকর্তা মো. আলী হাসান পাপ্পু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার ও শক্ত অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বড় একটি রাজনৈতিক দল মনে করছে তারা ক্ষমতায়। এদিকে বাকি দলগুলোরও প্রচুর সমর্থক। এখন যে পক্ষ ভোটের দিন দেখবে তাদের আশা পূরণ হচ্ছে না তারা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করবে। অন্যান্যদের প্রচুর সমর্থক থাকায় তারাও থেমে থাকবে না। আর যারা ভোটের মাঠে থাকবে না, তারা এ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আরও উসকে দিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
“তাই নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। যদিও প্রশাসনে এখন ৪০ শতাংশ বিএনপি সমর্থক, ৩০ শতাংশ জামায়াতের সমর্থক আছেন। বাদ বাকিদের মধ্যেও পতিত আওয়ামী লীগের সহচররা আছেন। তারা যে যার ফায়দা উঠানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।”
ঢাকা-১৩ আসনের ভোটার ও চা দোকানি শান্ত আহমেদ রতন বলেন, “যদি ভোট হয় তাহলে নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা আছে। কারণ সাধারণ মানুষ এখনো ভোটের জন্য প্রস্তুত না।
“ভোটের পর কোনো একটা পক্ষ আসবে। তারা এসে আমার মত ছোট ব্যবসায়ীর ওপর ভর করবে, সে তুলনায় এখনই ভালো আছি।”
ঢাকা-৮ আসনের ভোটার ও গৃহিণী সামিহা তাবাসসুম তফসিলের পর বৃহস্পতিবার রাতে বলছিলেন, “ভোট হলে তা পক্ষপাতিত্বমূলক হবে।”
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই পক্ষপাত এবারও যদি ভোট হয়, তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হচ্ছে না।
“ভোট হলে সেদিন কোনো কোনো পক্ষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নির্বাচন ও প্রশাসনকে শক্ত অবস্থানে থেকে সব ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তরুণরা নতুন অভিজ্ঞতার অপেক্ষায়
চট্টগ্রাম-৩ আসনের নতুন ভোটার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিম বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ ১৫ বছর তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আমি মনে করি, এবার তরুণদের হাত ধরে আমরা সেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারব।
“এছাড়া জীবনের প্রথম ভোট সেটাও যদি গণতান্ত্রিক পদযাত্রার এক দৃষ্টান্ত হয়, বেশ আনন্দিত এ ভোট নিয়ে। আশা করি, সরকার নিরাশ করবে না।”
ফেনী-১ আসনের নতুন ভোটার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় ভূঁইয়া বলেন, “দেশে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার থেকে বঞ্চিত। নতুন ভোটার এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আমি চাই আগামী নির্বাচন যেন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী কারিব চৌধুরী বলেন, “আশা রাখব এই নির্বাচন কমিশন হবে পক্ষপাতহীন ও একটি স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশন। ভোটার হওয়ার পর বিগত নির্বাচনে আমি আমার ভোট প্রদান করতে পারিনি। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২৬ এর এই ভোটই হবে আমার প্রথম ভোট।”
‘দুর্নীতিবাজ বাদ দিয়া সবাইকে নিলে ভালো হত’
আগামী সংসদ নির্বাচন আরও অংশগ্রহণমূলক হতে পারত মন্তব্য করে ঢাকা-১৭ আসনের ভোটার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কাওসার আহমেদ বলেন, “যেহেতু সমাজে চোর-ছ্যাচড় নিয়েই আমাদের বসবাস, ইতিহাস ও সমাজে ক্ষমার প্রচলন আছে; তাই সব পক্ষকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা হলে ভালো হত।“
ভোটের দিন কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সরকার তা সামাল দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেন তিনি।
কাওসার বলেন, “তারাতো (সরকার) পরীক্ষা না দিয়ে পাস করতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের সামনেই দাঁড়াতে পারে না। যদি শক্তিশালী কোনো পক্ষ (কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকা আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে) নির্বাচনে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করে তাহলে সরকার কতটুকু সামাল দিতে পারবে তা নিয়ে ভয় আছে।”
মাদারীপুর-৩ আসনের বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটার ও ঢাকায় থাকা চাকরিজীবী সাইদুল জমাদ্দার বলেন, “যে নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারতেছে না সে নির্বাচন নির্বাচনই না। দুর্নীতিবাজগো বাদ দিয়া সবাইরে নিয়ে নির্বাচন হইলে ভালো হইত।“





