দল গোছাচ্ছে বিএনপি

BNP-5c40db72aa714

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর এখন দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বস্তরে কাউন্সিল করে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে চাইছে দলটির হাইকমান্ড।

এ প্রক্রিয়ায় মূল দলের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি থেকে শুরু করে ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি নতুন করে গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলটি ঢেলে সাজাতে চলেছে সমর্থনপুষ্ট পেশাজীবী সংগঠনগুলোকেও। নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করতে দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে বিপর্যস্ত বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে চায়।

নির্বাচনে ‘অবিশ্বাস্য’ বিপর্যয়ের পর বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে বিরাজ করছে হতাশা। এ অবস্থা থেকে দলকে বের করে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। আপাতত দল গোছানোর লক্ষ্যে দ্রুত দলীয় ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কাউন্সিল করতে চাইছেন তারা। চাইছেন জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে। গ্রেফতার

হওয়া নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করার উদ্যোগও নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এ জন্য একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া ধানের শীষের প্রার্থীদের নিজ নিজ আসনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সার্বিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মামলা পরিচালনা ও জামিনের ব্যবস্থা করতে আর্থিক এবং আইনগত সহায়তার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার সমকালকে বলেন, দলকে সুসংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। বিএনপিও তাই করছে। এতদিন নির্বাচনী কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম খুব বেশি সম্ভব হয়নি। এখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনের পাশাপাশি দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দেবেন তারা।

বিএনপি নেতারা বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে সুসংগঠিত করে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ‘ভবিষ্যৎ করণীয়’ নির্ধারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও একাধিক বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে দল পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নেতারা।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও দুই বছর আগে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করেন খালেদা জিয়া। আংশিক ওই কমিটি ছিল ১৫৩ সদস্যের। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রদলের কমিটি ১৫১ সদস্যের। তবে কমিটি ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল, এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি হবে ২০১ সদস্যের। আংশিক কমিটি ঘোষণার ১৫ মাস পর ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।

২০১৭ সালের অক্টোবরে স্বেচ্ছাসেবক দলের ‘সুপার ফাইভ’ কমিটি ঘোষণা দেওয়া হলেও তা এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। একই বছরের ১৭ জানুয়ারি যুবদলের ‘সুপার ফাইভ’ ঘোষণা করা হয়। এ সংগঠনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মহিলা দলের কমিটি গঠন করা হয়। কৃষক দল, শ্রমিক দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস), তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দলের অবস্থা আরও বেহাল। একই অবস্থা চলছে অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোতেও। তাই দ্রুত দল ও সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার কাজে নেমেছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘সুপার ফাইভ’ বা ‘সুপার সেভেন’ কমিটি করার পরিবর্তে কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন পদ্ধতি বেছে নেওয়া হচ্ছে।

দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গঠিত ‘সুপার ফাইভ’ বা ‘সুপার সেভেন’ কমিটিকে অনেকেই ‘পকেট কমিটি’ বলে থাকেন। অনেকের অভিযোগ, এতে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত হয়। তবে এবার তৃণমূলের মত নিয়েই নতুন কমিটি করা হবে। ভোটের মাধ্যমেই এসব কমিটির নেতা নির্বাচিত করা হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সমকালকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে থাকার সময় ‘বগুড়া মডেল’ কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন শুরু করেছিলেন। এই মডেল অনুযায়ী, তৃণমূল পর্যায়েও কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব গড়ে উঠত এবং দলের মূল শক্তি মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরাও মতামত দিতে পারতেন। এর ফলে তৃণমূলের প্রতি নেতৃত্বের টান জন্মে, আবার কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্বও বেড়ে যায়।

বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের কমিটিও নতুন করে গঠিত হচ্ছে। এরই মধ্যে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টর’স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য গঠন হয়েছে ১৭ সদস্যের ‘সাবজেক্ট কমিটি’। আগামী ১৯ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিটি একটি ‘আহ্বায়ক কমিটি’ করবে। এ কমিটি সারাদেশের সব ইউনিটে কাউন্সিল করে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে একই প্রক্রিয়ায় ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

গত শনিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ড্যাব নেতারা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। এ বৈঠকের পুরো সময়ই স্কাইপিতে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন ড্যাবের এমন একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সভার শুরুতেই তারেক রহমান গণতান্ত্রিক উপায়ে বিএনপিসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি করার প্রত্যয় বক্ত করেছেন। এ জন্য সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।

এ বৈঠকেই গঠিত হয় ১৭ সদস্যের ‘সাবজেক্ট কমিটি’। এ কমিটির সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক আজিজুল হক, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যাপক রফিকুল করিম লাবু, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন হোসেন, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, অধ্যাপক বজলুল গণি ভূঁইয়া, ডা. শহিদুল আলম, ডা. সিরাজুল হক, ডা. শাহিদ হাসান, ডা. মোর্ত্তজা হারুন, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল প্রমুখ।

Pin It