আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ার পরও তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার ঢাকার ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের দ্বিতীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই প্রশ্ন তোলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “সাধারণ ছাত্ররা যারা, তাদের ১০ দফা দাবি মেনে নিয়েছে ভিসি। তারপরও না কি তারা আন্দোলন করবে। কেন করবে, জানি না। এরপর আন্দোলন করার কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে।”
বুয়েট ছাত্রলীগের এক দল নেতা-কর্মীর নির্যাতনে গত ৬ অক্টোবর প্রাণ হারান তড়িৎ কৌশল বিভাগের ছাত্র আবরার।
এই হত্যাকাণ্ডের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল এখন বুয়েট। ছাত্রলীগ ইতোমধ্যে ১১ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
১০ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুক্রবার আলোচনায় বসে বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ, আসামিদের বহিষ্কার করাসহ বিভিন্ন দাবি পূরণের আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি বাস্তবায়ন বাস্তবে না দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত কয়েকদিন আগে বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে। আমরা তো পিছিয়ে থাকিনি। কোন দল করে, সেটা না, খুনিকে খুনি হিসেবে দেখি। অন্যায়কারীকে অন্যায়কারী হিসেবে দেখি। অত্যাচারীকে অত্যাচারী হিসেবে দেখি।
“খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে কারও আন্দোলনের অপেক্ষা করিনি, কারও নির্দেশের অপেক্ষা করিনি, সঙ্গে সঙ্গে আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি যে এদেরকে গ্রেপ্তার করা এবং ভিডিও ফুটেজ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে।”
এই তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের ‘বিপদে’ পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই ভিডিও ফুটেজ যখন সংগ্রহ করছে তখন তারা বাধা দিয়েছিল, কেন বাধা দিয়েছিল, আমি জানি না।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে পুলিশের আইজিপি ছুটে আসলো.. কী করব। বললাম, তারা কী চায়। বলল, কপি চায়। বললাম কপি করে তাদের দিয়ে দাও। তোমরা তাড়াতাড়ি ফুটেজটা নাও, এটা নিলেই তো আমরা আসামি চিহ্নিত করতে পারব, ধরতে পারব, দেখতে পারব এবং সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারব।
“এই তিন-চার ঘণ্টা সময় যদি নষ্ট না করত, তাহলে তার আগেই হয়ত অনেকে পালাতে পারত না, তারা ধরা পড়তে পারত। এখানে সন্দিহান হওয়ার কিছু ছিল না। বিষয়টা কী আমি জানি না। সন্দিহান, না কি যারা জড়িত তারা বাধা, কোত্থেকে কী করেছে, বুঝতে পারি না। মনে হলো যেন আসামিদের চলে যাওয়ার একটা সুযোগই করে দেওয়ার.. না কি ছিল..ওই আন্দোলন যারা করেছে তারা বলতে পারবে।”
সরকার প্রধান বলেন, “আমি কিন্তু এক মিনিট দেরি করিনি। খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি এই ধরনের অন্যায় করলে কখনও তা মেনে নেওয়া যায় না।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্র ঢোকানোর জন্য সামরিক শাসকদের দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার আমল থেকে শুরু করে এরশাদের আমলে, সব সময় ছিল একটা অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। হিজবুল বাহার নামে যে জাহাজ জাতির পিতা বাংলাদেশের জনগণকে হজ করতে পাঠাত, হজ করা বন্ধ করে দিয়ে সেটা হয়ে গেল প্রমোদতরী।”
ছাত্রদলের কোন্দলে এক যুগ আগে বুয়েটে সাবেকুন নাহার সনি হত্যার ঘটনাটি তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “ছাত্রদলের দুই গ্রুপ বুয়েটে। তাদের টেন্ডার নিয়ে গোলাগুলিতে মারা গেল সাবেকুন নাহার সনি। সেই হত্যার কি বিচার হয়েছে? তখন কে প্রতিবাদ করল?
“তখন আমাদের বুয়েটের যারা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, তারা তো নামে নাই। তাদেরকে তো তখন নামতে দেখিনি। তখন তো প্রতিবাদ করতে দেখিনি তাদের। তখন তো তারা কোনো কথা বলেনি। হ্যাঁ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সবার কথা বলার অধিকার আছে। বলতে পারে অন্তত, এই সুযোগটা আছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “যখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে জাতির পিতার খুনিদের পুরস্কৃত করল, একেকটা হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের যারা ছেড়ে দিল, সাত খুনের আসামি কে যখন নেতা বানাল, কে তখন প্রতিবাদ করেছে? তখন মানবাধিকারের চিন্তা কোথায় ছিল? তখন ন্যায়নীতিবোধ কোথায় ছিল?
“আমি খালি জিজ্ঞেস করতে চাই, এত ছাত্র হত্যা হয়েছে, কয়টার বিচার কে করেছে। সেই ৭৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে করেছে, আর যখনই আমরা সরকারে এসেছি তখন আমরা সাথে সাথে বিচার করেছি। এর বাইরে কি আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে কোনো বিচার হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো অন্যায়-অবিচার আমরা সহ্য করব না, করি নাই। ভবিষ্যতেও করব না। যারাই করুক, সে যেই অপরাধী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার পরিবেশ রাখতে হবে।”
মহিলা শ্রমিক লীগের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী, সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার ভূঁইয়া।