গত জুন মাসের শেষে দেশের দারিদ্র্য হার সাড়ে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৮ সালের জুন মাস শেষে এই হার ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এ দিকে গত জুন শেষে অতি দারিদ্র্য হার নেমেছে সাড়ে ১০ শতাংশে। এক বছর আগে এর হার ছিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তথ্য দেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৬ সালের খানা ব্যয় ও আয় জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এই অনুমিত হিসাব করেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্ট আয় করতে পারলে ওই ব্যক্তিকে দরিদ্র হিসাবে ধরা হয় না।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য হার কমানোয় খুশি। দেশের শ্রমিক, কৃষকসহ মেহনতি মানুষের অবদানের কারণে দারিদ্র্য কমেছে। তবে দারিদ্র্য হার আরও কমলে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আরও খুশি হতেন।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বিকাশ কিশোর দাস বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ বৈষম্যের কারণে দারিদ্র্য কমানোর গতি কম।
অতি দারিদ্র্যের হারকেই আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা হিসেবে ধরা হয়। কোনো দেশে এ হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এলে ওই দেশকে ‘দারিদ্র্যমুক্ত দেশ’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) মূল উদ্দেশ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হওয়ার লক্ষ্য আছে।
বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে প্রায় এক কোটি লোক নিজেদের হতদরিদ্র অবস্থা কাটানোর যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। সরকারি তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১০ সালে দেশে হতদরিদ্র ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৮ লাখ। ২০১৯ সালের জুন মাস শেষে অতি গরিব বা হতদরিদ্র ব্যক্তির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখের কিছুটা বেশি।
বিবিএসের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন ১৬ কোটি ৪৬ লাখ জনগোষ্ঠী আছে। সব মিলিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে সোয়া তিন কোটি মানুষ।
স্বাধীনতার পরপর ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে এ দেশে প্রায় অর্ধেক মানুষই হতদরিদ্র ছিল। তখন হতদরিদ্রের হার ছিল ৪৮ শতাংশ। আর দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত সাড়ে ৮২ শতাংশ মানুষ। নব্বইয়ের দশকের আগ পর্যন্ত এই পরিস্থিতির খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। নব্বইয়ের দশক থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে নানামুখী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি নেওয়ায় পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে। দারিদ্র্য হটানোর নানা কর্মসূচি আরও বেশি গতি পায় ২০০০ সালের পর।