দুই অর্ধে যেন দেখা গেল দুই রিয়াল মাদ্রিদকে। প্রথমার্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে মুগ্ধতা ছড়াল জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধে সেই দলকে যেন চিনতে হলো জার্সি দেখে। স্পেনের সফলতম দলকে কাঁপিয়ে দিলেও হার এড়াতে পারেনি এইবার। ফেরার ম্যাচে স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে রোববার স্থানীয় সময় বিকালে ৩-১ গোলে জিতেছে রিয়াল। টনি ক্রুস, সের্হিও রামোস ও মার্সেলো প্রথমার্ধে পান জালের দেখা। এইবারের একমাত্র গোলদাতা পেদ্রো বিগাস।
বিরতির আগে ও পরে রিয়ালের পারফরম্যান্সে যেন ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। শুরুতে একচেটিয়া চাপ ধরে রাখা দলটিই কী-না দ্বিতীয়ার্ধে কোণঠাসা হয়ে পড়ল। মূলত এদেন আজার ও দানি কারভাহালকে তুলে নেওয়ার পরই তাদের অমন দশা হয়।
রিয়ালের মাত্র তৃতীয় কোচ হিসেবে জিদানের দুইশতম ম্যাচে কাঙ্ক্ষিত জয়ে বার্সেলোনার সঙ্গে ব্যবধান ফের ২ পয়েন্টে নামিয়ে এনেছে রিয়াল।
মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচে জিদানের জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছে আজারের ফেরা। দীর্ঘদিন পর মাঠে নেমে চেনা ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন এই বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। বেঞ্চে ফিরে রামোস ও আজারের পায়ে বরফ দিয়ে বসে থাকার দৃশ্য অবশ্য কিছুটা দুশ্চিন্তার খোরাকও জোগাচ্ছে।
ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বাড়ানো রিয়াল গোলের দেখা পায় চতুর্থ মিনিটে। বাঁদিক দিয়ে বল পায়ে ডি-বক্সে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে এগোনোর চেষ্টায় ছিলেন করিম বেনজেমা। পারেননি তিনি। এইবারের মিডফিল্ডার সের্হিও আলভারেস বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন টনি ক্রুসের পায়ে। ডি-বক্সের মাথা থেকে উঁচু কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন জার্মান মিডফিল্ডার।
দারুণ গোছানো আক্রমণে ৩০তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রামোস। মাঝমাঠের অনেক আগে থেকে বল পায়ে তিনি একটু এগিয়ে বাড়ান বাঁ দিকে বেনজেমাকে। ফরাসি এই ফরোয়ার্ড পাস দেন ডান দিকে চোট কাটিয়ে ফেরা আজারকে। ডি-বক্সে ঢুকে পড়া বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডকে বাধা দিতে এগিয়ে আসেন গোলরক্ষক। সুযোগ বুঝে সামনে বল বাড়ান তিনি, ফাঁকা জালে লক্ষ্যভেদ করেন রিয়াল অধিনায়ক।
৩৬তম মিনিটে রিয়ালের আরেকটি গোছানো আক্রমণ, এইবার রক্ষণের আরেকটি ভুল এবং স্কোরলাইন ৩-০। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে জোরালো শট নেন শুরু থেকে দারুণ খেলতে থাকা আজার। গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দেওয়ার পর ক্লিয়ার করতে গিয়ে এইবারের এক খেলোয়াড় বল তুলে দেন মার্সেলোর পায়ে। বুলেট গতির শটে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান লেফট-ব্যাক।
৫৬তম মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল সফরকারীরা। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার এদু এক্সপোসিতোর জোরালো শট দারুণ নৈপুণ্যে ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। দুই মিনিট পর সের্হি এনরিকের হেড ক্রসবারে লাগলে জাল অক্ষত থাকে রিয়ালের। আগের মিনিটে বদলি নামা স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ডের সেটাই ছিল বলে প্রথম ছোঁয়া।
তবে তৃতীয় দফায় আর রক্ষা হয়নি রিয়ালের। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি বেনজেমা, পেয়ে যান দে ব্লাসিস। তার জোরালো শট বিগাসের গায়ে লেগে জালে জড়ায়।
বিরতির পর রিয়ালের খেই হারানোর সুযোগে চাপ বাড়াতে থাকে পয়েন্ট টেবিলের নিচের দিকের দলটি। ৭০তম মিনিটে মার্সেলোর ভুলে দ্বিতীয় গোল পেতে পারতো তারা, কিন্তু ডি-বক্সে অরক্ষিত পেদ্রো লেওনের নিচু শট রুখে দেন কোর্তোয়া।
আগের দিন মায়োর্কাকে ৪-০ গোলে হারানো বার্সেলোনা ২৮ ম্যাচে ১৯ জয় ও চার ড্রয়ে ৬১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে। ১৭ জয় ও আট ড্রয়ে রিয়ালের পয়েন্ট ৫৯।
তিনে থাকা সেভিয়ার পয়েন্ট ৫০।
দিনের প্রথম ম্যাচে আথলেতিক বিলবাওয়ের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করা আতলেতিকো মাদ্রিদ ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে ষষ্ঠ স্থানে।