বরিশাল নদী বন্দরে বিক্রি করে দেওয়া টিকিট সংরক্ষণের ঘটনা হাতে নাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে ধরা পড়ার ঘটনায় তিন কর্মচারীকে সাসপেন্ড করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
শনিবার এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
এর আগে ওই ঘটনায় বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। ওই বন্দরের আরও ১৫ কর্মচারীর বদিলর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বন্দরে দীর্ঘদিন কর্মরত সকল কর্মচারীকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত: এ নদী বন্দরে প্রবেশ করতে যাত্রীপ্রতি ১০ টাকা হারে শুল্ক নেওয়া হয়।
সাসপেন্ড হওয়া তিন কর্মচারী হলেন- শুল্ক আদায়কারী মো. ফারুক সর্দার, মাসুদ হোসেন খান ও মো. মনির হোসেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে ঢাকা নদী বন্দরে বদলি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর মানব সম্পদ বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ আবু জাফর হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, তিনজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে ‘দায়িত্ব পালনে অবহেলা’, ‘অসদাচরণ’ ও ‘আÍসাতের’ অভিযোগ ওঠায় তাদেরকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে। এছাড়া একজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে এ সংস্থার বন্দর বিভাগ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর বন্দর বিভাগের পরিচালক কাজী ওয়াকিল নওয়াজ বলেন, দুদকের একটি টিম বরিশাল বন্দরে অনিয়মের তথ্য পেয়েছে। এর আগেও এ বন্দরের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের সঙ্গে মারামারির অভিযোগ আছে। এসব কারণে এ বন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করে দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত ২৮ জুন বরিশাল নদী বন্দরে অভিযান চালায় দুদকের বরিশালের একটি টিম। ওই অভিযানে বরিশাল নদী বন্দরের ২ নম্বর কাউন্টারে বিক্রি করা ৮৬৩টি টিকিট ড্রয়ার ও ঝুলিয়ে রাখা ব্যাগ থেকে জব্দ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব টিকিট আবারও যাত্রীদের কাছে বিক্রি করার জন্য রাখা হয়েছে। অপরদিকে এক নম্বর কাউন্টার থেকে বিক্রি হওয়া টিকিটের তুলনায় বেশি টাকা পেয়েছে। একই টিকিট একাধিকবার বিক্রি করায় বাড়তি টাকা আদায় করা হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।
জানতে চাইলে ওই বন্দরের বদলি হওয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, দুদক টিম কিছু বিক্রি করা টিকিট জব্দ করেছে। ওই ঘটনায় দায়ি তিন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমার বদলির বিষয়টি রুটিন ওয়ার্ক।
তবে নাম প্রকাছে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা, বরিশালসহ কয়েকটি নদী বন্দরে বিক্রিত টিকিট পুনরায় বিক্রি করার বিস্তর ঘটনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে টিকিট ছাপিয়েও বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর সিবিএর কয়েকজন নেতারা সরাসরি সম্পৃক্ত। তাদেরকে প্রতি মাসে এসব বন্দর থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজোশ থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে বছরের পর বছর এ ধরনের অপরাধ হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।