বাজারে প্রচলিত ১০টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে ‘সীসাসহ ভারী ধাতু এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান’ থাকার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আদেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান বুধবার ওই দশ কোম্পানির বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলাগুলো দায়ের করেন।
প্রতিষ্ঠানগুলো হল- বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা), আফতাব মিল্ক অ্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্ট, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ (ফার্ম ফ্রেশ), বারো আউলিয়া ডেইরি মিল্ক অ্যান্ড ফুডস (ডেইরি ফ্রেশ), ব্র্যাক ডেইরি (আড়ং দুধ), ইছামতি ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস (পিওরা), ইগলু ডেইরি লিমিটেড, প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, শিলাইদহ ডেইরি লিমিটেড (আল্ট্রা মিল্ক) ও তানিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টস।
কামরুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে এসব কোম্পানির দুধে ‘মারাত্মক ক্ষতিকর ভারী ধাতুর’ উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
“তাই এসব প্রতিষ্ঠানের রিবুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
ইগলু মিল্কের হেড অব মার্কেটিং সুরাইয়া সিদ্দিকা বলেন, “দুধে সীসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি কারণ দর্শাও নোটিস পাঠিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি আমরা বিসিএসআইআরসহ কয়েকটি ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখেছি সীসা নির্ধারিত সীমার মধ্যেই আছে।
“এখন সরকারের নতুন পদক্ষেপের পর আমরা আবার নতুন করে টেস্ট করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
ব্র্যাক ডেইরির পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো কারণ দর্শাও নোটিস তারা পাননি।
“বিএসটিআই থেকে একটি নোটিস এসেছিল, জবাব আজই জমা দেওয়া হয়েছে। কোনো নোটিস বা তার উত্তর পাওয়ার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে কীভাবে মামলা করা হল তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
সরকারের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই যে ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধকে জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ বলছে, তার ১১টির নমুনায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার চাইতে বেশি সীসার উপস্থিতি পাওয়ার কথা এর আগে হাই কোর্টকে জানিয়েছিল নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে দশটি কোম্পানির বিরুদ্ধেই এবার মামলা করা হল।
গত ১৬ জুলাই বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ছয়টি ল্যাবে পরীক্ষা করে ওই ১১টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে সীসা এবং কোনো কোনোটিতে ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে।
মানুষের শরীরে অতিরিক্ত সীসা বা ক্যাডমিয়াম জমা হলে স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে, রক্তের রোগ তৈরি হতে পারে, এমনকি কিডনি জটিলতা বা ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে।
ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই কী আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে, সে বিষয়ে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিতে সেদিন আদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।