প্রথম বিপিএল ফাইনাল, প্রথম শিরোপার সুবাস। উপলক্ষ্য এলো, জ্বলে উঠলেন তামিম ইকবাল। ব্যাট হাতে হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে উড়িয়ে দিলেন ঢাকার বোলিং। চোখধাঁধানো সব শটে উপহার দিলেন অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। দারুণ সব কীর্তিতে গাঁথলেন রেকর্ডের মালা। অতিমানবীয় ইনিংসে কুমিল্লাকে উপহার দিলেন শিরোপা।
ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১৭ রানে হারিয়ে বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
বিপিএলে কুমিল্লার এটি দ্বিতীয় শিরোপা। ২০১৬ আসরের শিরোপা জয়ী ঢাকা রানার্সআপ হলো টানা দ্বিতীয়বার।
মিরপুরে শুক্রবার ২০ ওভারে কুমিল্লা তোলে ৩ উইকেটে ১৯৯ রান। তামিমের একার ব্যাট থেকেই এসেছে ৬১ বলে অপরাজিত ১৪১! রান তাড়ায় ঢাকা এক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ জানালেও পরে পথ হারিয়ে থমকে গেছে ১৮২ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লার ইনিংস ছিল এক কথায় ‘তামিম-শো।’ খেলেছেন নিজের এক যুগের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। আন্দ্রে রাসেল বোলিংয়ে এলেন, বল উড়ল মাঠের নানা প্রান্তে। এলেন রুবেল হোসেন, সাকিব আল হাসানও। দৃশ্য একই। এ দিনের তামিমকে থামানোর কোনো পথ ছিল না।
ইনিংসটির পথে তামিম ওলটপালট করে দিয়েছেন রেকর্ড বই। ৫০ বলে ছুঁয়েছেন সেঞ্চুরি, বিপিএলে তো বটেই, টি-টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম সেঞ্চুরি।
বিপিএলে এটি তামিমের প্রথম সেঞ্চুরি। বিপিএলের ফাইনালে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বড় ইনিংসও এটি। ছাড়িয়েছেন এখানে নিজেকেই। ২০১৩ সালে বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টিতে ইউসিবি-বিসিবি একাদশের হয়ে করেছিলেন ১৩০ রান। বিপিএলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ছিল সাব্বির রহমানের ১২২।
ইনিংসটির পথে ১০টি চারের পাশে ১১টি ছক্কা মেরেছেন তামিম। সাব্বিরের ৯ ছক্কা ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের আগের রেকর্ড।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কুমিল্লা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে হারিয়েছিল এভিন লুইসকে। তামিম বরাবরের মতোই শুরুতে সময় নিয়েছেন কিছুটা। আরেকপাশে এনামুল হকও এগিয়েছেন ধীরগতিতে।
থিতু হওয়ার পর তামিম খেলতে থাকেন একের পর এক শট। আরেকপাশের ব্যাটসম্যান তখন কেবল দর্শক।
দ্বিতীয় উইকেটে ৮৯ রানের জুটিতে এনামুলের রান ছিল ৩০ বলে ২৪। চতুর্থ উইকেটে ১০০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ইমরুলের রান ২১ বলে ১৭। গোটা ইনিংস ছিল যেন তামিম-শো।
সাকিবের ১০ বলে ৩০ রান নিয়েছেন তামিম, রাসেলের ১৫ বলে ৩২। এবারের আসরের অন্যতম সেরা বোলার রুবেলের ১৩ বলে নিয়েছেন ৩৭ রান!
এ দিন যা চেয়েছেন, সবই যেন করতে পেরেছেন তামিম। এমনকি ব্যাটের কানায় লাগা বলগুলিও গুলির বেগে ছুটেছে বাউন্ডারিতে।
১০ ওভার শেষে যে দলের রান ছিল ৭৩, ২০ ওভার শেষে তারাই দুইশর কাছে। শেষ ১০ ওভারে দলের ১২৬ রানের ১০৩ রানই এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে!
রান তাড়ায় ঢাকার জবাবটাও ছিল জুতসই। দ্বিতীয় বলেই রান আউট হয়েছেন সুনিল নারাইন। কিন্তু উপুল থারাঙ্গা ও রনি তালুকদার দুর্দান্ত খেলে জমিয়ে তোলেন ম্যাচ। জিইয়ে রাখেন ঢাকার সম্ভাবনা। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটিতে শতরান আসে ৫০ বলেই।
দারুণ গতিতে ছুটতে থাকা এই জুটিকে থামান থিসারা পেরেরা। ২৭ বলে ৪৮ করে আউট হন থারাঙ্গা।
এবারের আসরে কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলা রনি নিজের সেরাটা জমা রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য। ৩৮ বলে তার ৬৬ রানের ইনিংসটি শেষ হয় এনামুল হকের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউটে।
ঢাকার পেছন পানে হাঁটা তখন শুরু হয়ে গেছে। সাকিব আল হাসান পারেননি পরিস্থিতির দাবি মেটাতে। আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ড পারেননি ঝড় তুলতে। শেষ দিকে আসা কিছু রানে কমেছে হারের ব্যবধান।
ব্যাটিংয়ের পর ফিল্ডিংয়েও তামিম ছিলেন দুর্দান্ত। অনেকটা দৌড়ে নিয়েছেন সাকিবের ক্যাচ, আরও বেশি দূর ছুটে নিয়েছেন পোলার্ডের। দিনটিই ছিল তামিমের, এ দিন তিনি যেন কোনো ভুল করতে পারেন না!
নায়ক হয়েই ঘোচালেন তিনি বিপিএল শিরোপার আক্ষেপ। তামিমের এমন পারফরম্যান্সের দিনে কুমিল্লাও যেন হারতে পারত না!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৯৯/৩ (তামিম ১৪১*, লুইস ৬, এনামুল ২৪, শামসুর ০, ইমরুল ১৭*; রাসেল ৪-০-৩৭-০, রুবেল ৪-০-৪৮-১, সাকিব ৪-০-৪৫-১, নারাইন ৪-০-১৮-০, অনিক ২-০-১৯-০, শুভাগত ১-০-১৪-০, মাহমুদুল ১-০-১২-০)।
ঢাকা ডায়নামাইটস: ২০ ওভারে ১৮২/৯ (থারাঙ্গা ৪৮, নারাইন ০, রনি ৬৬, সাকিব ৩, পোলার্ড ১৩, রাসেল ৪, সোহান ১৮, শুভাগত ০, মাহমুদুল ১৫, রুবেল ৫*, অনিক ১*; সাইফ ৪-০-৩৮-২, মেহেদি ৩-০-৩০-০, ওয়াহাব ৪-০-২৮-৩, সঞ্জিত ১-০-১০-০, আফ্রিদি ৪-০-৩৭-০, থিসারা ৪-০-৩৫-২)।
ফল: কুমিল্লা ১৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল
ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: সাকিব আল হাসান