দুর্নীতিবাজ, খুনি-সন্ত্রাসীদের দলে ভেড়াবেন না: কাদের

khulna-10-12-19-picture-02-5def8e891c5fd

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দুর্নীতিবাজ, খুনি-সন্ত্রাসীদের দলে ভেড়াবেন না। আওয়ামী লীগে দূষিত রক্তের প্রয়োজন নেই। খারাপ লোকদের বিতাড়িত করে ভালো লোকদের শেখ হাসিনার দরজায় প্রবেশের সুযোগ দেবেন।

মঙ্গলবার খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, মঞ্চ যত বাড়ছে, নেতাও তত বাড়ছে। নেতা যত বাড়ছে, কর্মী তত কমছে। এখন পোস্টার-ব্যানার লাগাতে কর্মী খুঁজে পাওয়া যায় না। টোকাই দিয়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে পোস্টার লাগাতে হয়। কর্মীরা এখন নেতা, কে লাগাবে পোস্টার?

তিনি বলেন, ছবি টাঙিয়ে, বিলবোর্ড প্রদর্শন করে নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে হলে নেতৃত্বের যোগ্যতা, কর্মীদের ভালবাসা অর্জন করতে হবে।

নেতাদের উদ্দেশ্য করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক কর্মীর কোনো পরিচয় নেই। ঘরে গিয়ে তারা কিছু বলতে পারে না। এসব কর্মীদের মূল্যায়ন করুন। কর্মীরা বাঁচলে আওয়ামী লীগ বাঁচবে। দুঃসময়ের কর্মীদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদীদের নেতা বানাবেন, সময় এলে এসব সুবিধাবাদীরা থাকবে না। দুঃসময় এলে বসন্তের কোকিলেরা হারিয়ে যাবে।

শুদ্ধি অভিযানকে শেখ হাসিনার ডাইরেক্ট অ্যাকশন বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। তিনি বলেন, খুলনায় কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে না বলে ভাববেন না তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কিছু জানেন না। তিনি সব কিছু জানেন। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসীরা সাবধান। কখন কে ধরা পড়বে বলা মুশকিল। আপনারা সতর্ক হয়ে যান। ভালো হয়ে যান।

বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত না হতে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, বিএনপি এখন পথহারা পথিকের মতো দিশেহারা। বিএনপির রাজনীতি ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে। একে একে উইকেট পড়ছে। দু’টি উইকেট পড়েছে, আরও উইকেট পড়ার অপেক্ষায়।

তিনি বলেন, বিএনপির অপর নাম এখন নালিশ পার্টি। মির্জা ফখরুল ইসলামের মুখে দুর্নীতিবিরোধী কথা ভূতের মুখে মুখে রাম রাম ধ্বনি। হাওয়া ভবন দুর্নীতি ভবন, মানুষ বলে খাওয়া ভবন।

এসময় বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণা নিয়ে হাস্যরস করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, এই মাস না ওই মাস। দেখতে দেখতে ১১ বছর কেটে গেছে। আন্দোলন হবে কোন মাসে? দুর্নীতিগ্রস্ত ও সন্ত্রাসী বিএনপিকে মানুষ আর ক্ষমতায় আসতে দেবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য প্রধান বিচারপতির এজলাসে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন তা নজিরবিহীন। এ ঘটনা দেখে বোঝা যায় বিএনপি কতোটা উচ্ছৃংখল।

তিনি বলেন, দল ক্ষমতায় আসার পরে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তারাই টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে দলকে মুক্ত রাখতে হবে।

এর আগে সকাল ১০টায় দলীয় পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ড. মশিউর রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। বিশেষ বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও নির্বাহী সদস্য মির্জা আজম, খুলনা-২ আসনের সাংসদ শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, বাগেরহাট-২ আসনের সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম মিলন, সাবেক মৎস্য মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাংসদ গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশদ। পরিচালনা করেন নগর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী।

নতুন কমিটিতে চমক: দ্বিতীয় অধিবেশনে বিকাল ৪টায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন। সম্মেলনে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন তালুকদার আবদুল খালেক। এই পদে আর কোনো প্রার্থী ছিলো না। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন যুগ্ম সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা।

সম্মেলনে মহানগর সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদকসহ ৫ জন প্রার্থী আলোচনায় ছিলেন। এর মধ্যে সবচেয়ে কম আলোচিত ছিলেন বাবুল রানা। দলের মধ্যে সৎ ও ত্যাগী নেতা হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। সম্মেলনে আড়াই শতাধিক তোরণ এবং কয়েক হাজার ফেস্টুনের কোথাও বাবুল রানার নাম কিংবা ছবি ছিলো না। আলোচিত নেতাদের টপকে তার সাধারণ সম্পাদক হওয়া ছিলো সম্মেলনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।

জেলা সম্মেলনে সভাপতি পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন শেখ হারুনুর রশীদ। ১৯৯২ সাল থেকে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। এই পদে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। শেষ পর্যন্ত তার ওপরই আস্থা রেখেছেন নেত্রী।

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে কম আলোচিত অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন।

Pin It