সরকারের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
তিন দিনব্যাপী জেলাপ্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে (ভার্চ্যুয়াল) এ কথা বলেন তিনি।
মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশের আনাচে-কানাচে মাদকের অপব্যবহার যুবসমাজকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাদকদ্রব্য যাতে যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে না দেয় সে দিকেও আপনাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। তাই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ’
মাঠ প্রশাসনে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। ’
ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। দায়িত্ব সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। কিন্তু ক্ষমতার যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, তা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন। ’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দেবেন। আমরা আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেবেন। মনে রাখতে হবে জনগণের টাকায়ই আমাদের সংসার চলে। তাই জনগণকে সেবাদান কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয়। সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার। ’
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের নেওয়া কর্মসূচির সুফল যেন প্রকৃত দরিদ্ররা পায় তা নিশ্চিত করতে বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
ভূমি বিষয়ক অনিয়ম বন্ধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘ভূমি রেকর্ডের সময় এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী স্থানীয় প্রভাবশালী দালালচক্রের সহযোগিতায় অনেক অনিয়ম করছে এবং অবৈধ সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে জনভোগান্তি বেড়েছে। তাই এসব ব্যাপারে আপনাদের কঠোর হতে হবে এবং যে কোনো অনিয়ম বন্ধ করতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ’
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সামাজিক বনায়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন, জলাভূমির উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের চলমান কর্মসূচির বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে বলেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা সদরে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষা করতে কঠোর হতে হবে। এটা করতে পারলেই উন্নয়ন সুষম ও জনমুখী হবে।