আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে রংপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের।
মঙ্গলবার রংপুর নির্বাচন অফিস থেকে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হোসেন লেবু। এ সময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাফিয়ার রহমান শাফি, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রহমান, আইনজীবী ফেডারেশনের সদস্য মাসুদার রহমান, জেলা নেতা আতোয়ার রহমান, নুরন্নবী চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতা তার সঙ্গে ছিলেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আজমল হোসেন লেবু গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে রংপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন ফরমসহ যাবতীয় কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) রাতেই ঢাকায় মনোনয়নপত্রটি পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে পৌঁছানো হবে।
রংপুর-৩ আসনে এখন জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য হিসাবে রয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদ পুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ।
আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে জিএম কাদের নির্বাচন করলে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে পার্টির চেয়ারমানের মধ্যে বিরোধ তৈরি হবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসাবে জিএম কাদের দেশের যে কোনো আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। এখন সাদ এরশাদ যদি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন, তখন আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব।
মঙ্গলবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি একথা বলেন। মো. মুজিবুল হক চুন্নু এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, দলের চেয়ারম্যান বা সভাপতির অপশন আছে যে কোনো জায়গা থেকে নির্বাচন করার। আমাদের দলের চেয়ারম্যান যেখানেই নির্বাচন করতে চাইবেন, সেখানেই তিনি ভোট করতে পারবেন। দলের কেউ সাহস রাখে না সেখানে গিয়ে ভোট করার। ওই আসনের সংসদ-সদস্য ছিলেন আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এখন সেখানে যদি চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চান, তাহলে কারও কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। যিনি আছেন তিনি তো দলের কাছেই আসেন না। তাকে নিয়ে চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই।
মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রংপুর এমন এক জায়গা যেখানে অন্য দলের মেয়র প্রার্থীর জামানত থাকে না আমাদের দলের প্রার্থীর কাছে। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। সেখানে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন করতে চাইলে করতে পারেন, আমরা এটাকে স্বাগত জানাব।
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দু-এক দিনের মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন বলে জানান দলটির মহাসচিব। রওশন এরশাদ আলাদাভাবে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মাঝে ফরম বিতরণ করবেন বলে গত ২ দিন ধরে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই বলেও জানান তিনি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নির্বাচন কমিশনে যে চিঠি দিয়েছেন সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তিনি টেলিফোনে আমাকে জানিয়েছেন লোক পাঠিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন। একই সঙ্গে তিনি সাদ এরশাদের মনোনয়ন ফরমটিও সংগ্রহ করবেন। হয়তো আজই (মঙ্গলবার) তিনি ফরম সংগ্রহ করবেন।
জাতীয় পার্টির দলীয় প্যাডে লেখা জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের গুজব সম্পর্কে দলটির মহাসচিব বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের একটি অংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব গুজব ছড়াচ্ছে। দলে জিএম কাদেরের নেতৃত্ব নিয়ে, যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তার নেতৃত্বে দল গত দু-তিন বছরে অনেক সংগঠিত হয়েছে। সুতরাং উনি পদত্যাগ করবেন কেন?
জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা জানাতে আরও সময় লাগবে উলেখ করে মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মানুষের মনে এখনও প্রশ্ন, এখনও সংশয়, ভোটকেন্দ্রে গেলে ভোট দিতে পারবে কিনা। জনগণের মনে ভোট নিয়ে শতভাগ আস্থা এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। তাই ভোটে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। আমরা কোনো জোট বা মহাজোটে নির্বাচন করব না। আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করব।
নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতার পালাবদল সম্ভব নয় মন্তব্য করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গত ৩৩ বছরে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচন নিয়েই সমালোচনা আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যারা নির্বাচনে জিতেছে তারা বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আর যারা ক্ষমতায় যেতে পারেনি তারা বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আনুপাতিক হারে এরশাদের নির্বাচন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন সামনে এসেছে। আমরা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চেয়েছি। তবে নির্বাচনের জন্য শতভাগ আস্থার পরিবেশ এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি।
দ্বিতীয় দিনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি : এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় দিনের মতো জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বনানীতে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কার্যালয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। মনোনয়ন ফরম উত্তোলন ও জমা উপলক্ষ্যে প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও উৎসবের আমেজ এবং নেতাকর্মীদের ভিড় চোখে পড়ে।
বিভিন্ন আসনের বিপরীতে নেতারা মনোনয়ন ফরম কিনছেন এবং জমা দিয়েছেন। বিশেষ করে কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আসেন সংসদ-সদস্য পদে বিভিন্ন আসনের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যক্তিরা। সঙ্গে নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল। হাততালি আর স্লোগানের তালে তালে বাজতে থাকে ব্যান্ডপার্টির বাদ্য। এমন আনন্দ আর উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান জানান, প্রতিটি মনোনয়ন ফরম ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিন ৫৫৭টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে, যা প্রায় এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা মূল্যের। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ নভেম্বর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের বকেয়া মাসিক চাঁদা পরিশোধ করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে হবে বলেও দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর আগে সোমবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে জাতীয় পার্টি। দ্বিতীয় দিনে ৬২২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে ২ দিনে ১১৭৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ তারিখ। রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়ন ফরম বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণের তারিখ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি।