দূরের স্বপ্নেও বাংলাদেশের পা বাস্তবতায়

image-726056-1696624058

ধর্মশালায় বিশ্বকাপের রঙ লেগেছে বেশ ভালোভাবেই। আসলে একজনই লাগিয়েছেন- অনুরাগ ঠাকুর।

বিশ্বকাপে স্বাগত জানিয়ে ভদ্রলোকের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথের প্রায় সবখানে তো বটেই; মিডিয়া সেন্টারে ঢোকার পথে আছে কেন্দ্রীয় এই মন্ত্রীর বিশাল পেইন্টিং।

পুরো পথজুড়েই পাহাড়ের মায়া আর হিমালয়ের দেখা মেলে ধর্মশালায়। এমন অপরুপ সৌন্দর্যের মধ্যে ডুবে থাকার উপায় খুব একটা নেই ক্রিকেটারদের। তারা এখানে আছেন ক্রিকেট মাঠের লড়াইয়ের জন্য। বাস্তবতায় পা রেখে দূরের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ সামনে।

ধর্মশালায় ক্রিকেটীয় লড়াই-ই এখন তাই দৃশ্যপটে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নানা ঘটনাপ্রবাহে এলোমেলো দলের কাছে কোচ-অধিনায়কের স্পষ্ট বার্তা ড্রেসিংরুমে ‘বাইরের কাউকে/কিছু নিয়ে কোনো আলাপ নয়’। তাদের কথা উপেক্ষা করার মতো ক্ষমতা সাজঘরের কারো নেই।

তবে সংবাদের খোঁজে থাকা মানুষদের আগ্রহ তো আর দমিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তামিম ইকবালের স্কোয়াডে না থাকা নিয়ে নাটক হয়েছে অনেকে। একে-অন্যেকে দোষারপের সারমর্মে এই আফগানিস্তান ম্যাচ। ওই দলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে পুরোনো ঘটনাও এলো অবধারিতভাবে।

তামিম না থাকায় ফজল হক ফারুকীর বিপক্ষে খেলা কি এবার একটু স্বস্তির হবে? বিরক্ত হাথুরুসিংহের উত্তরের প্রথম দুটি শব্দ ছিল ‘অদ্ভূত প্রশ্ন। ’ দলের বাইরে থাকা কারো ব্যাপারে প্রশ্নে কী উত্তর দেবেন, সেটিও বুঝতে পারলেন না তিনি।

হাথুরুসিংহে বিরক্ত হলেও একজনের নিশ্চয়ই বেজাড় হওয়ার কথা নয়। তার কারণেই তো এত নাটকের সূত্রপাত। ফারুকীর মুখ থেকে দুটি শব্দ শুনতে পারলে মন্দ হয় না; এমন ভাবনা থেকে প্রায় আধঘণ্টা ‘একা দর্শক’ হয়ে আফগানিস্তানের অনুশীলন দেখতে হলো।

কিন্তু আফগান পেসারকে পুরো সময়ই দেখা গেলো অস্থির হয়ে আছেন। শুরুতে মোহাম্মদ নবীকে নেটে বল করছিলেন। একটা বলও তিনি গুড বা ফুল লেন্থে ফেলতে পারলেন না। এ নিয়ে তার হতাশাও স্পষ্ট হচ্ছিল প্রতিটা বলের পরই। বোলিংয়ের সাইড বদলাচ্ছিলেন, দেখছিলেন রান-আপ ছোট করেও।

এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে এমন একটা নেটে গেলেন, যেখানে কোনো ব্যাটার নেই। ওখানেও অবশ্য ফারুকী বেশিক্ষণ খুশি মনে বল করতে পারলেন না। এসব দেখা বাংলাদেশের সাংবাদিকের তেমন কাজে আসার কথা নয়, আরও জরুরি কাজ পড়ে ছিল তখনও। দরকার হলো ফারুকীর মুখ থেকে দুয়েকটা কথা বের করতে পারা।

কিন্তু ওই উপায়ও খুব একটা নেই। প্র্যাক্টিসের মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমের অল্প একটু পথের জন্য জনা কয়েক বিশাল শরীরের দেহরক্ষী। তার ওপর মুখে ভীষণ বিরক্তি নিয়ে ফারুকী ড্রেসিংরুমে ফিরছেন তখন। সাহস করে প্রশ্নটা করেই ফেললাম, কাল কি তামিমকে মিস করবেন?

উত্তরে দুটি শব্দ পাওয়া হয়নি। তবে ফারুকীর মুচকি হাসির দেখা মিলেছে। অনুশীলনটা ঠিকঠাক মতো না করার বিরক্তি নিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরা ক্রিকেটারের মুখে এক চিলতে হাসি আনতে পারাই বা কম কী। রেগেমেগে কিছু বলে দেননি, এটুকুই স্বস্তি।

বাংলাদেশ দলে এখন যেটুকু স্বস্তি, তার প্রায় পুরোটাই অবশ্য উবে যেতে পারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে গেলে। টুর্নামেন্টের ‘টোন সেট’ করতে প্রথম ম্যাচটিতে জয় ভীষণ জরুরি। এরপর? চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রাথমিক লক্ষ্য সেমিফাইনাল খেলা।

মাঠে নামার আগে পরিসংখ্যান একটু বিব্রতই করতে পারে বাংলাদেশকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিই যে হেরে বসে আছে তারা। স্বস্তি কেবল এটুকুই- জয় এসেছে এশিয়া কাপের মঞ্চে খেলা শেষ ম্যাচটিতে।

দল নিয়ে তেমন কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাকে ওপেনিংয়ে খেলাতে চাওয়া নিয়েই পরে ঘটে গেছে হুলস্থূল কাণ্ড। এখন কি মিরাজই ওপেনিংয়ে খেলবেন?

এ নিয়ে কিছুই স্পষ্ট করেননি হাথুরুসিংহে। কাল সকালেই সব ঠিক হবে বলে আশা তার। উইকেট নিয়েও দু দলের ছিল ভিন্ন মত। বাংলাদেশ কোচ বলেছেন, রান হবে বেশ। আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ আবার মনে করেন এখানে সুবিধা পাবেন পেসাররা।

তিনি বেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- আগের বার একটি ম্যাচ না জেতা দল এবার ভালো করবে। তার শুরু বাংলাদেশের বিপক্ষেই করার তাড়না আছে আফগানিস্তানের, সেটি বোধ হয় না বললেও চলছে।

ওপাড়ে ‘পৃথিবীর ছাদ’ তিব্বত। এপাড়ে ধর্মশালার মায়াবী সৌন্দর্য। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে বড় স্বপ্নের বিশ্বকাপ। চার বছর পরপর আসা টুর্নামেন্ট নিয়ে ক্রিকেটাররা তো বটেই, হাথুরুসিংহের মতে তার কোচিং স্টাফরাও রোমাঞ্চিত। আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে? সম্ভবত ওই কথাটা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন একদিন আগেই বলে দিয়েছেন, ‘এখন না হলে আর কখন ?’

Pin It