দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়িয়েছে

image-196237-1604483942

রূপকল্প ২০৪১-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। তিনি বলেন, উন্নয়নের বর্তমান ধারাকে ধরে রেখে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করে বাংলাদেশের অর্থনীতি পরবর্তী উচ্চতর অগ্রগতির পথে যাত্রা করবে।

শিল্প মন্ত্রী আজ বুধবার ( ৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ আয়োজিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) দলিলের খাতভিত্তিক অধ্যায় ০১, ০২ এবং ০৩ এর ওপর জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এক ভার্চু্য়াল পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ পরামর্শ প্রদান করেন। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসজনিত ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত ৭২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ও সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি ইতিমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শিল্পমন্ত্রী এসময় ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে থাকা অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা সহজ শর্তে অর্থায়ন সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা দলিলে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার পাশাপাশি ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পখাতের উন্নয়ন এবং সেবা খাত বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর ফলে শিল্প ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার কাজ যেমন এগিয়ে যাবে তেমনি নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাত ধরে যাতে দেশের সামগ্রিক শিল্প খাত এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে শিল্প বান্ধব আইন, বিধি, কর ও শুল্ক কাঠামো, কোয়ালিটি ইনফ্রাসট্রাকচার ও ভৌত অবকাঠামো গড়ে তুলেছে। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিল্পখাতের অবদান ৩০ দশমিক ৪২ থেকে বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি বলেন, পাট, চামড়া, চা’র মতো স্থানীয় কাঁচামাল ভিত্তিক যেসকল শিল্পখাতে সর্বোচ্চ মূল্য সংযোজন করা সম্ভব সেগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ বান্ধব আঁশ পাটের চাহিদা বিশ্ববাজারে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটচাষিরা আগের তুলনায় বেশি মূল্যে পাট বিক্রি করতে পেরে লাভবান হচ্ছেন।

বেসরকারি খাতে পরিচালিত পাটকলগুলো ভাল করছে বলে তিনি এসময় উল্লেখ করেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী স্থানীয় শিল্পগুলোর সুরক্ষায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহবান জানান। তিনি শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি তাঁর বক্তৃতায় শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করতে ন্যায়পাল ব্যবস্থা কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ঝুলে থাকা বা বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিচার বিভাগে জনবল বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে এসএমই খাত অত্যন্ত কার্যকর। এখাতের উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি সহজ শর্তে ঋণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা আহবান জানান।

সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারীদের একটি সুখবর হচ্ছে শিল্প স্থাপনে জমি রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশনের কাজ যাতে ৭ দিনের মধ্য নিশ্চিত করা যায় সেরকম একটি ব্যবস্থা শীঘ্রই চালু করা হবে। এতে বিনিয়োগ যেমনি বাড়বে, তেমনি সুশাসনও নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের বিষয়ে এ বছরের শেষ নাগাদ একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ভার্চুয়াল সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব কে এম আব্দুস সালাম, জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, শিল্প সচিব কে এম আলী আজম, বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সচিব পদমর্যাদায়) সুলতানা আফরোজ, টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এমসিসিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ফারুক আহমেদ, এসিআইয়ের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী সভায় বক্তৃতা করেন।

Pin It