বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, দলীয়কারণ ও দুর্নীতির ফলে দেশ আজ ভয়াবহ সংকটের দিকে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও অর্জনগুলো দেশের কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থন্বেষী মহলের জন্য আজ বিসর্জন হতে চলছে।
বৃহস্পতিবার গণফোরামের উদ্যোগে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে দলীয়করণের সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ যারা আত্মসাৎ করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে নাই। আর্থিক খাতে এসব দুর্নীতিগ্রস্থদের বিচারহীনতা ক্রমাগত অর্থপাচার, লুটপাট আজ মহামারি আকার ধারণ করছে।
দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবেই সরকার বিদেশে অর্থ পাচার করছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে সরকার দেশের কথা একদমই মনে না রেখে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। দেশের প্রতি তাদের আস্থা নেই। তারা নিজেরাও বাইরে চলে যাবে।
ড. কামাল হোসেন এ সময় বলেন, টাকা পাচারের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ করতে হবে। সবাইকে সংগঠিত করে জাতীয় অর্থনীতিকে রক্ষায় পাহারা দিতে হবে। ব্যাংক থেকে কোথায় টাকা যাচ্ছে, কিভাবে যাচ্ছে— এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে। প্রয়োজনে এসব অনিয়ম বন্ধ করতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যেখানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে সেখানে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দুর্নীতি ও লুটপাটের রিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, অবিলম্বে এসব চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে দেশে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য গুরুত্ব না দিলে জাতীয় অর্থনীতিকে বাঁচানো যাবে না উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়লে বেকারত্ব বাড়বে, আয় কমে যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্যে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অর্থাৎ সার্বিকভাবে সবার ক্ষতি হবে। এখান থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব নেতিবাচক ও সমাজবিরোধী কাজ, বিশেষ করে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একটি সমৃদ্ধ ও অগ্রসরমান বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এসএম আলতাফ হোসেন, মোশতাক আহমদ, শাহ নূরুজ্জামান, শফিউর রহমান খান, মো. ইয়াসিন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।