দেয়াল ও গ্রিল বেয়ে ৮ থেকে ১০তলা ভবনে উঠতে পারেন ইসমাইল খান। এরপর টার্গেট বাসার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে করেন চুরি।
এই বিশেষ দক্ষতার কারণে তিনি ‘কালো মাকড়সা’ নামে পরিচিত।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কেরানীগঞ্জের কূলচর এলাকা থেকে এই কালো মাকড়সাকে গ্রেফতার করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যে দুই সঙ্গী ফাহাদ হোসেন কমল ও আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি ভবনের সপ্তম তলায় সপরিবারে থাকেন তৌহিদুল ইসলাম। গত ৩০ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে সপরিবারে নরসিংদীর মনোহরদিতে গ্রামের বাড়িতে যান। পাঁচদিন পর তার স্ত্রী ঢাকায় ফিরে বাসার দরজা খুলে দেখেন বাসার সব কক্ষের মালামাল এলোমেলো। মূল শোবার কক্ষ ও অন্যান্য কক্ষের তিনটি আলমারির তালা খোলা এবং রান্না ঘরের পাশের জানালার গ্রিল কাটা। আলমারির ভেতরে রাখা টাকা, স্বর্ণের গহনা ও বিদেশি ব্র্যান্ডের ঘড়িসহ প্রায় সাড়ে ১২ লাখের বেশি টাকার মালামাল চুরি হয়েছে।
এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়। মামলার তদন্তে ঘটনাস্থল থেকে বেশ দূরে একটি সিসি ক্যামেরার অস্পষ্ট ফুটেজে মাস্ক ও ক্যাপ পরা একজনকে ব্যাগ হাতে সিএনজিতে করে চলে যেতে দেখা যায়। এই অস্পষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য প্রযুক্তির সহায়তায় ইসমাইল খানকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তার কাছ থেকে নিউ ইস্কাটনের বাসা থেকে চুরি হওয়া বিদেশি ব্র্যান্ডের দুটি ঘড়িসহ স্বর্ণ ও হীরা যাচাই করার যন্ত্র, স্বর্ণ পরিমাপের যন্ত্র, ক্যামেরা, চোরাই মোবাইল, ৩ কেজি পরিমাণ বিদেশি ধাতব মূদ্রা, ডলার, রিয়েল, কুয়েত দিনার, রিংগিতসহ উল্লেখ্যযোগ্য পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা ও অত্যাধুনিক গ্রিল কাটার মেশিন জব্দ করা হয়েছে।
ডিসি এইচ এম আজিমুল হক বলেন, অপর দুই চোর ফাহাদ হোসেন কমলকে ঢাকার রুপনগর এলাকা থেকে এবং আরিফ হোসেনকে কাফরুল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চোরাই মোবাইল ফোন, হাতঘড়ি, বিদেশি মুদ্রা, ক্ষুদ্রাকৃতির টর্চলাইট, চুরিতে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল এবং স্বর্ণ মাপার যন্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
পরে তিনজনের তথ্যের ভিত্তিতে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়। তারা তিনজন গোপাল ঘোষের কাছে শতাধিকবার চোরাই স্বর্ণ বিক্রি করেছে বলে স্বীকার করেছে।
গ্রেফতার তিন চোর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল এলাকায় গ্রিলকাটা ও বাসার দরজার তালা ভেঙ্গে চুরির একটি ভয়ংকর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। যে চক্রে কাজ করে আরও ২০ জন।
২০১৪ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই চক্রটি ঢাকার মিরপুর, কলাবাগান, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, লালবাগসহ চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল এলাকায় পাঁচ শতাধিক চুরির সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।
আজিমুল হক বলেন, গ্রেফতার ইসমাইল খান দেয়াল ও গ্রিল বেয়ে উঠে বহুতল ভবনের টার্গেট বাসা/ফ্ল্যাটে গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে চুরি করে। দেয়াল ও গ্রিল বেয়ে ৮ থেকে ১০তলা ভবনে ওঠার বিশেষ দক্ষতার কারণে তিনি ‘কালো মাকড়সা’ নামে পরিচিত।
আরিফ হোসেন দরজার তালা ভাঙ্গতে দক্ষ। ফাহাদ হোসেন কমল চুরির স্পট থেকে সামান্য দূরে মোটরসাইকেল নিয়ে চুরির পর নিরাপদ প্রস্থানের জন্য অপেক্ষা করার পাশাপাশি পুলিশের গতিবিধি খেয়াল করে।
তিনি বলেন, এই চক্রের অন্য ২০ সদস্য মূলত বিভিন্ন এলাকার চুরি করার মতো সম্ভাব্য বাসা/ ফ্ল্যাট সম্পর্কে তথ্য দেয়। এই ২০ সদস্য চুরির সময় চুরির স্পটে থাকে না। এই সদস্যরা সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে যে বাসা/ফ্ল্যাটের লাইট অফ দেখে, সেই বাসা/ফ্ল্যাটকে সম্ভাব্য টার্গেট হিসেবে ধরে গ্রেফতার তিনজনকে জানায়।
পরে তারা তিনজন সুবিধাজনক সময়ে গ্রীলকেটে/দরজার তালা ভেঙ্গে চুরি করে। এই তিনজন বাকি ২০ সদস্যকে তাদের বিকাশ, রকেট ও নগদ একাউন্টে নিয়মিত টাকা পাঠায়।
চক্রের বাকি ২০ সদস্যকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতার ইসমাইলের বিরুদ্ধে ৪টি, আরিফের বিরুদ্ধে ২টি ও ফাহাদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা পাওয়া গেছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।