গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে আওয়ামী লীগের সরকার। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং দলের নেতা-কর্মীরাও পালিয়েছেন।
প্রায় সাড়ে তিন মাস পেরোলেও এখনো প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না তারা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ, প্রশাসন, বিচার, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সংবিধান সংস্কারেরও উদ্যোগ নিয়েছে। গঠন করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
এই সংবিধান সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করার পর দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠনের কথা ওঠে এবং বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিএনপিসহ অংশীজনদের কেউ কেউ সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পক্ষে মতও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান বা মতামত জানার চেষ্টা করা হয় পক্ষ থেকে। তবে দলের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থাকায় রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ্যে তুলে ধরার মতো অবস্থায় নেই আওয়ামী লীগ। এর মধ্যেই দলটির দুই-একজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে নয় এবং সংবিধান সংস্কারেও তাদের সমর্থন নেই।
আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের মতে, সংবিধান সংস্কার বা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা গঠিত সংসদ। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত নয়। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার, সংসদ বা কোনো কর্তৃপক্ষই কেবল এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ করতে পারে।
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় তিনি জানান, জাতীয় সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে, নাকি বর্তমানে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে সে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।
যদিও বিশিষ্টজনরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুবিধার কথা বলে আসছেন। তুলে ধরছেন চ্যালেঞ্জের কথাও। মানবাধিকার সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠিত হলে আইন প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সংসদের দুটি কক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। এই ব্যবস্থা চালুর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা এই সুপারিশ সংস্কার কমিশনকেও দিয়েছি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশন প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেক ধরনের মতামত আছে। অনেক রকম গুরুত্বপূর্ণ, অভিনব, সৃজনশীল প্রস্তাব রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনেও এমন প্রস্তাব এলে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো। সব পর্যালোচনা করেই সরকারকে সুপারিশ দেবো। কিছু সুপারিশ নতুন কমিশন বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করবে।