দ্বিতীয় দফায় স্বেচ্ছায় আরো ১ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচর যাওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে ২১ টি বাসে চড়ে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন তারা। প্রতিটি বাসে মোট ৩০ জন করে রোহিঙ্গা রয়েছেন।
এছাড়াও এই গাড়িবহরে পুলিশের একটি গাড়ি এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এরআগে রবিবার বিকেলে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যেতে উখিয়া কলেজ মাঠে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়। মূল ক্যাম্প ছাড়াও ৩৪ টি ক্যাম্প থেকেই ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা রবিবার বিকেল ৪টা থেকেই ট্রানজিট পয়েন্টে আসতে শুরু করে। সোমবার সকালেও অনেকে ট্রানজিট ক্যাম্পে এসে জড়ো হয়।
গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গা ভাসানচরে গেছে। এর আগে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে সমুদ্র উপকূলে আটক আরো তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।
টেকনাফের নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালংয়ের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক্যাম্পের মাঝিরা বলেন, গতবারের উল্টো এবারের চিত্র। ওই সময় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিতে অনেক বোঝাতে হয়েছে। কিন্তু ২০ দিনের মধ্যে এ চিত্রের ধরন পাল্টেছে। এবার রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে নিজেরাই তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ভাসানচরে ৪ ডিসেম্বর যাদের আত্মীয়-স্বজন গেছে, তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধার খবর শুনেই অনেকেই যেতে উদগ্রীব। গতবার যখন জোর করে গোপনে বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে লুকিয়ে তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে আনা হয়েছিল, এবার সেরকম নয়। বিকেলে অনেকেই প্রথম ট্রিপের যাত্রী হতে আগে ভাগেই সপরিবারে ট্রানজিট ক্যাম্পে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
স্থানীয় রোহিঙ্গা মাঝিরা বলছেন, আগামীতে ভাসানচরে যাওয়ার জন্য আরো উৎসাহী হতে দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের তালিকাভুক্ত ক্যাম্প ছাড়া বাকি সব ক্যাম্প থেকেই যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৮ ডব্লিউ ক্যাম্প থেকে যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার। উখিয়ার কুতুপালং-৪ নম্বর ক্যাম্প থেকে ২৭ পরিবার যাবে। কুতুপালং-২ ডব্লিউ থেকে যাবে ২৪ পরিবার।
উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (ইস্ট) মাঝি বলেন, আমার ব্লক থেকে কয়েকটি পরিবার ভাসানচরে যাচ্ছে। তাদের কাউকে জোর করা হয়নি।
একই ক্যাম্পের সাবেক মাঝি নুর মোহাম্মদ বলেন, এ ক্যাম্প থেকে আবদুস সালাম ও আবুল হাশেম মাঝির পরিবারসহ বেশকিছু ঘর নোয়াখালীর ভাসানচরে যাবে। প্রথম দফায় যারা গেছেন, তাদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধার খবর জেনেই নতুন করে অনেকেই যেতে আগ্রহী হয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দফা ভাসানচর যাত্রা নিয়ে উখিয়ার ইউএনও নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভাসানচরের পথে চট্টগ্রাম থেকে চূড়ান্তভাবে জাহাজে না উঠা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের যাত্রা নিয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। প্রথমবার যেভাবে সময়মতো গণমাধ্যমকে সবকিছু জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পরবর্তী ধাপেও একইভাবে জানানো হবে।