সারা দেশেই প্রতিনিয়ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। জীবন ধারণের জন্য দৈনন্দিন চাহিদার পণ্য কিনতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।
যখন কোনোভাবেই দ্রব্য মূল্যের লাগাম টানতে পারছে না সরকার তখনই দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেল উপস্থাপন করেছেন যুগ্ম সচিব কাজী আবেদ হোসেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) হিসেবে কাজ করছেন যুগ্ম সচিব কাজী আবেদ হোসেন। তার উদ্ভাবন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সেটি বিশ্লেষণের পর পাঠানো হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। সেখান থেকে গত ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ পত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কাজী আবেদ হোসেন এ প্রক্রিয়ায় আশা দেখছেন। তিনি মনে করেন, তার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ মডেল দেশব্যাপী বাস্তবায়ন করা গেলে সরকার সফল হবে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন যুগ্ম সচিব কাজী আবেদ হোসেন।
তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শহর, উপজেলা থেকে জেলা-বিভাগ, রাজধানী পর্যন্ত মূল্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল তুলে ধরা হয়েছে এ উদ্ভাবনে। সেখানে প্রতিটি পর্যায়ে নিত্যপণ্যের দাম হবে যৌক্তিক, আবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে না প্রান্তিক কৃষকও। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হলে আমাদের দেশ খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি মাত্রায় এগিয়ে যাবে। কারণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মডেলটিতে সরকারের অর্থ ব্যয় হবে না, অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন নেই, নতুন আইন তৈরির দরকার নেই। এটি সাধারণ মানুষের সহজ বোধগম্য ও তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
তার এই মডেলে সাধারণ মানুষের হাতে কীভাবে কমমূল্যে সহজভাবে পণ্য পৌঁছতে পারে সেজন্য অন্তত ৫০টি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। এটি সরকার যদি বাস্তবায়ন করে তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ মডেলের রূপরেখার ব্যাখ্যায় বলা হয়, এ ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত জনবল ও খরচ ছাড়াই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রয়োজন হবে না নতুন আইন তৈরিরও। যেখানে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে তিনটি কমিটি গঠন করতে হবে এবং বাজারে আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে যেকোনো নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ হবে কৃষক, উৎপাদক বা আমদানি মূল্যের ওপর। সাধারণ সময়ের পাশাপাশি অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ দুর্যোগকালীন আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে করণীয়ও তুলে ধরা হয় এ উদ্ভাবনী পত্রে।
কাজী আবেদ হোসেনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী গ্রামীণ হাট থেকে জেলা বা বিভাগীয় শহরের প্রতিটি বাজারে বোর্ডের বাজারদর তুলে ধরতে হবে। যা নির্ধারণ করা হবে উৎপাদক বা কৃষক পর্যায়ের দামের ওপর। কোনো বিক্রেতা ওই দামের অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না।
যুগ্ম সচিব বলেন, এ রূপরেখা বাস্তবায়ন হলে ৬৪ জেলা, বিভাগীয় শহর, উপজেলা ও গ্রামীণ হাট পর্যায়ে দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত হবে। নিত্যপণ্যের মূল্য কমাতে কৃষকের উৎপাদক খচর কমানোর ওপরেও জোর দেওয়া হয়েছে আমার মডেলে। যেখানে কৃষকের জন্য ডিজেলসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য হ্রাস এবং হিমাগার, নিত্যপণ্য পরিবহণ ও অন্যান্য বিষয়ে নজরদারির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মডেলটি আরও গ্রহণযোগ্য বা তথ্যভিত্তিক ও বহুমাত্রিক করতে দেশের সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ এবং প্রাজ্ঞজনের সমন্বয়ে একটি গবেষণা কমিটি করার প্রস্তাব রাখা হয়।
কাজী আবেদ আলী এর আগে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ না ধরার মডেল প্রস্তুত করেছিলেন। যা ২০১১ সাল থেকে দেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে।