দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির শীর্ষ পাঁচে বাংলাদেশ: বিশ্ব ব্যাংক

world_bank-2-5ca5ce25ea43d

বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে, বিশ্বে এমন পাঁচটি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে, বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন তার চেয়ে অনেক কম।

বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে সংস্থার নিজস্ব কার্যালয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর রবার্ট জে শোম। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।

বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বিবিএসের সাময়িক হিসেবে বলা হয়েছে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। সাধারণত দেখা যায়, অর্থবছরের আট মাসের তথ্য দিয়ে বিবিএস প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব করে, চূড়ান্ত হিসাবে তার তেমন পরিবর্তন হয় না। বিবিএসের প্রাক্কলন অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি হলে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ।

এদিকে বুধবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক প্রকাশনা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, ভুটান ও ভারত। পঞ্চম অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটান ও ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ইথিওপিয়ার। আফ্রিকার দেশটির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে রুয়ান্ডার।

সংবাদ সম্মেলনে রবার্ট জে শোম বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একটি। শিল্প ও সেবা খাতের সম্প্রসারণ এবং সরকারি ও বেসরকারি ভোগ বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। রফতানি প্রবৃদ্ধিও ভালো হচ্ছে। তৈরি পোশাক খাতে রফতানি বেড়েছে। প্রবাসী আয়েও ভালো অবস্থা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী হচ্ছে। তৈরি পোশাক খাত এবং অন্যান্য খাতে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে। আউশ আমনের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি অর্থবছরে চাল আমদানি নেই বললেই চলে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদনও বাড়ছে। তবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে দুর্বলতা রয়ে গেছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে, তবে যেভাবে হওয়ার দরকার সেভাবে হচ্ছে না। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) জিডিপির তুলনায় অনেক কম। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহও বাড়ছে না। মূলধনী যন্ত্রের আমদানিও কমেছে।

বিবিএস এবং এডিবির সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের পার্থক্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, রফতানি, বেসরকারি ঋণপ্রবাহ, ব্যক্তি বিনিয়োগ, প্রবাসী আয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা, রাজস্ব আদায় ও ভোগের তথ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংক নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করে থাকে। এটা তাদের নিজস্ব পদ্ধতি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের পরে বিশ্ব অর্থনীতি শ্লথ হয়ে আসতে পারে। ভূ-রাজনীতি, তেল সরবরাহ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব এবং ব্রেক্সিটের প্রধান কারণ হতে পারে। কিন্তু এর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হবে।

Pin It