অপেক্ষায় ছিল শক্ত বাধা, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে লড়াই তাদের আঙিনাতেই। সেই চ্যালেঞ্জ যেন পাত্তাই দিল না বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ব্যাটিং, দারুণ বোলিং আর ক্ষিপ্র ফিল্ডিং, সব মিলিয়ে জমাট অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। দক্ষিণ আফ্রিকার আশা গুঁড়িয়ে যুব বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে পা রাখল বাংলাদেশের যুবারা।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পচেফস্ট্রুমে বৃহস্পতিবার ২৬১ রানের পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশের যুবারা ১৫৭ রানে আটকে দেয় প্রোটিয়াদের।
ব্যাটিংয়ে দারুণ দুটি ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের তানজিদ হাসান ও শাহাদাত হোসেন। অসাধারণ বোলিংয়ে ৫ উইকেট নিয়ে জয়ের আরেক নায়ক বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান।
যুব বিশ্বকাপে এবার নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার শেষ চারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে সেমি-ফাইনালে উঠেছিল মেহেদী হাসান মিরাজের দল। সেবার সেমি-ফাইনালে হারার পর তৃতীয় হয়েছিল বাংলাদেশ।
সেনওয়েস পার্কে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এই ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমেছিল টস হেরে। উঁকি দিচ্ছিল আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৬ রানে ৯ উইকেট হারানোর স্মৃতি। কিন্তু ওপেনিংয়ে এবার ৮৪ বলে ৮০ রানের দ্যুতিময় ইনিংস খেলেন তানজিদ। ফিফটি করেন তৌহিদ হৃদয়। ৭৬ বলে ৭৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে শাহাদাত দলকে টেনে নেন শেষ পর্যন্ত।
বোলিং শুরু থেকেই ছিল আঁটসাঁট। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের স্বস্তির অবকাশ দেয়নি বোলাররা। উইকেট খানিকটা মন্থর বুঝে রকিবুলের সঙ্গে আরেক বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদকেও একাদশে রাখে বাংলাদেশ। সবাই রাখেন অবদান। রকিবুল ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। ১৯ রানে নেন ৫ উইকেট।
আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতার কারণেই হয়তো, সকালে বাংলাদেশের দুই ওপেনারের শুরুটা ছিল বেশ সাবধানী। প্রথম ৫ ওভারে ব্যাট থেকে আসেনি বাউন্ডারি। রান ছিল ১৫।তানজিদের সৌজন্যে এরপর বাড়তে থাকে রানের গতি। পরের ৫ ওভারে রান আসে ৩৩।
আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন অবশ্য ছন্দ খুঁজে পাননি। ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তার বিদায়েই। আউট হন ৪০ বলে ১৭ রান করে।
মন্ডলি খুমালোর দারুণ ফিল্ডিংয়ে এরপর রান আউট হয়ে যান তিনে নামা মাহমুদুল হাসান জয়। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে একটু চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে তানজিদের স্ট্রোকের ফোয়ারায় সরে যায় চাপ। ৫২ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। খুমালোর এক ওভারে মারেন তিনটি চার। এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে, তবে পারেননি তিন অঙ্কে যেতে।
১২ চারে তার ৮০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি শেষ হয় আলগা শটে। স্টাম্পের বাইরের বল তুলে দেন পয়েন্ট ফিল্ডারের হাতে।
তানজিদ ফিরে গেলেও হৃদয় ও শাহাদাতের জুটি ধরে রাখে রান প্রবাহের ধারা। দুজনের জুটি পেরিয়ে যায় শতরান। দুজনই দেখা পান ফিফটির।
হৃদয় আউট হয়ে যান ফিফটির পরপরই (৭৩ বলে ৫১)। তবে শাহাদাত চালিয়ে গেছেন। জেরাল্ড কোয়েটজির এক ওভারে মারেন দুটি চার, এক ছক্কা। শেষ পর্যন্ত করেন ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৭৪।
শেষ দিকে ঝড় তোলার সামর্থ্য আছে যার, সেই শামীম হোসেন রান আউট ১ রানে। অধিনায়ক আকবর আলি শেষ দিকে করেন ১১ বলে অপরাজিত ১৬। বাংলাদেশ গড়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোর।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সেভাবে চ্যালেঞ্জও জানাতে পারেনি। রান তাড়ার শুরুতে যদিও তারা রক্ষা পেয়েছিল বড় ধাক্কা থেকে। শরিফুল ইসলামের বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান জোনাথন বার্ড, উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ ছাড়েন অধিনায়ক আকবর।
বাংলাদেশ সেটি পুষিয়ে দেয় দ্রুতই। পেসার তানজিম হাসান দলকে এনে দেন প্রথম উইকেট। রকিবুল বোলিংয়ে আসার পর প্রোটিয়াদের রানের চাকা হয়ে যায় শ্লথ, উইকেট আসতে থাকে দ্রুত।
জীবন পাওয়া সেই বার্ডকে ৩৫ রানে থামান রকিবুল, মিড উইকেটে ভালো ক্যাচ নেন শামীম। অধিনায়ক ব্রাইন্স পারসন্সকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন রকিবুল।এরপর বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিংয়ে আর সেভাবে দাঁড়াতেই পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং। তানজিমের বাড়তি বাউন্সে বিদায় নেন টাইরিশ কারেলসা। শরিফুলের বলে তানজিমের অসাধারণ ক্যাচে ফেরেন জ্যাক লিস।
রকিবুল দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নেন আরও ২ উইকেট। যুব ওয়ানডেতে প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ পান নিজের শেষ ওভারে।
ওই ওভারেই খুমালোর রান আউটে শেষ দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। বাংলাদেশ মেতে ওঠে আনন্দ নৃত্যে।
এবারের আসরে বাংলাদেশের আগে শেষ চারে উঠেছে ভারত ও নিউ জিল্যান্ড। শুক্রবার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচে নির্ধারিত হবে শেষ চারের শেষ প্রতিনিধি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯: ৫০ ওভারে ২৬১/৫ (পারভেজ ১৭, তানজিদ ৮০, মাহমুদুল ৩, হৃদয় ৫১, শাহাদাত ৭৪*, শামীম ১, আকবর ১৬*; মোলেটসেন ২/৪১, ফন ভুরেন ১/৪৬)।
দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯: ৪২.৩ ওভারে ১৫৭ (বিউফোর্ট ৬০, বার্ড ৩৫, লিস ১৯, কোটানি ১৫; শরিফুল ৭-০-২৮-১, শামীম ৯-০-৩৬-১, তানজিম ৭-০-৪১-২, রকিবুল ৯.৩-০-১৯-৫, মুরাদ ৯-০-২৬-০, হৃদয় ১-০-৭-০)।
ফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ১০৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রকিবুল হাসান