নগদ অর্থ পাবে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবার

image-151368-1589314544

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ যেমন রিকশা-ভ্যানচালক ও মোটর শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিকদের মতো পেশাজীবীরা সরকারি সহায়তা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তর থেকে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৫০ লাখ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে নগদ অর্থ। প্রত্যেক পরিবার এককালীন ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবে।

প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের হিসাবে সরাসরি নগদ অর্থ প্রেরণের এই উদ্যোগের উদ্বোধন করবেন। বিতরণ চলবে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগ পর্যন্ত।

দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ কোটি মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে সরকার। আর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, দলীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা দলের পক্ষে এ পর্যন্ত সারাদেশে ৯০ লাখ ২৫ হাজার ৩২৭ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ৮ কোটি ৬২ লাখ ৮ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে।

এদিকে, করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগ উত্তরণ চেষ্টার সময়টায় দেশের হঠাত্ বিত্তশালীদের কোনো ভূমিকা নেই। তাদের পাওয়া যাচ্ছে না দরিদ্র-অসহায় মানুষের পাশে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হওয়া ৪ হাজার নেতাও মাঠে নেই। ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাত্কারীরা, মালয়েশিয়ায়, কানাডায় সেকেন্ড হোমের মালিক যারা হয়েছেন তাদেরও দেখা যাচ্ছে না এই মহাদুর্যোগের সময়। তবে অনেক মন্ত্রী-এমপি ও জনপ্রতিনিধি এই সংকটের শুরু থেকেই আছেন দরিদ্র, অসহায়, কর্মহীন ও বিপন্ন মানুষের পাশে।

এদিকে, করোনাসৃষ্ট মহাদুর্যোগে কে কী করছেন সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। জানা গেছে, জাতীয় সংকটে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতাকর্মী ও বিত্তশালীরা কে কী ভূমিকা রাখছেন তা বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগকালে দরিদ্র-অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে সব সংসদ সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী ও বিত্তশালীদের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দলের শতাধিক এমপি এক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। এলাকায়ও যাচ্ছেন না। এমন একটি রিপোর্ট সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে।

তবে জানা গেছে, অনেক এমপি এলাকায় না গেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে নিয়মিত দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। আবার কিছু রাজনীতিবিদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের এক জন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম এমপি। প্রায় প্রতিদিনই তার নিজ নির্বাচনি এলাকা সিরাজগঞ্জ-কাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রিকশাচালক, ভ্যানচালকসহ দরিদ্র, অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন তিনি। এ পর্যন্ত তিনি ৯০ হাজার দরিদ্র পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। এখন মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে তার পুত্র ও সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় সিরাজগঞ্জ ও কাজীপুর এলাকায় টানা ছয় দিন ত্রাণ বিতরণ করছেন। অপরদিকে, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে ২ হাজার ২০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্য ও ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। একইভাবে কবিরহাট উপজেলার দরিদ্র ৪ হাজার পরিবারের মধ্যে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মহীন পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। যারা লোকলজ্জার ভয়ে ত্রাণের কথা বলতে পারেন না, তাদের জন্য ‘জরুরি সেবা নাম্বার’ ০১৩১৮৩২৬০১৬ চালু করেছেন তিনি। ‘ডাক্তারের কাছে রোগী নয়, এবার রোগীর কাছে ছুটে যাবেন ডাক্তার’—করোনার দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের চিকিত্সা পদ্ধতি সহজ করতে এমনি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায়। বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন নিজ নিজ সংসদীয় আসনে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসবিরুল হক অনু নিজের অর্থায়নে এ পর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও ইফতার বিতরণ করেছেন। দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপির নেতৃত্বে ‘মানবতার ডাকঘর’ এর মাধ্যমে খাবার, ওষুধ ও ডাক্তার নিয়ে জনসাধারণের সেবা প্রদান করা হচ্ছে মিরপুরের টোলারবাগে। ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন নিজ উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১ হাজার দরিদ্র পরিবারের মধ্যে আটটি পদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

অন্যদিকে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের উদ্যোগে ৫০ হাজার পরিবারের মধ্যে সরকারি-ব্যক্তিগত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ৪০ হাজার কর্মহীন মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। জামালপুর-৩ আসনে দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। কেরানীগঞ্জ উপজেলায় তিন দফায় ৮০ হাজার মানুষের কাছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ঢাকা-১৫ আসনের এমপি শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদার মিরপুরে কয়েক দফায় সাড়ে ৫ হাজার মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। ঢাকা-২ আসনে করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষকে ত্রাণ দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম। রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি জিল্লুল হাকিমের ছেলে তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিম দেশে করোনা সংক্রমণ ঘোষণার পর থেকেই রয়েছেন এলাকায়। সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম ও তার ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিম নিজেদের আয়ের অর্থে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন ৩২ হাজার দরিদ্র মানুষকে। করোনা সংক্রমণ শুরু থেকে ফরিদপুর-১ আসনে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, আটা, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণ করেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার।

Pin It