মাঘের কুয়াশামাখা ভারে খেজুরের রস, সঙ্গে খৈ, মুড়ি আর পিঠা। গ্রাম বাংলার শীত যেন কংক্রিটের রাজধানীতে কাটিয়ে গেল একটি সকাল।
সাংস্কৃতিক সংগঠন রঙ্গে ভরা বঙ্গের আয়োজনে শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় অষ্টমবারের মত বসেছিল ‘রস উৎসব’।
উৎসবের উদ্বোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “এ ধরনের উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যর পুনরুজ্জীবন করা জরুরি। জাতিসত্তার অগ্রযাত্রায় সভ্যতার বিকাশ কীভাবে হল, এসব উৎসবের মধ্য দিয়ে সে কথা উঠে আসে।”
তিনি বলেন, একটি জাতি যখন উৎস সন্ধানে শেকড়ে যায়, তখনই বোঝা যায়, সে জাতি কতটা সমৃদ্ধ।
চারুকলার বকুলতলায় রস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। খেজুরের রস, খেজুরের গুড় আর খৈ-মুড়িতে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। টাঙ্গাইলের অর্জুনার খোকামণ্ডলের নাচারির দল পরিবেশন করে মনসামঙ্গলের বেহুলার ভাসানের অংশটুকু।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, “রসিক, রসালু, রসপ্রিয়- বহু শব্দ জড়িয়ে আছে বাঙালির নামের সঙ্গে। রসের সঙ্গে যেন এক গভীর সম্পর্ক আমাদের। রস নিয়েই আমাদের যত চর্চা।”
এ উৎসবে এসে বহুদিন পর খেজুরের টাটকা রসে গলা ভেজানোর সুযোগ হয়েছে অনেকের। আর বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা অনেক শিশুর জন্য এই রসের আস্বাদন ছিল একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা।
বাংলা একাডেমির ফোকলোর বিভাগের সাবেক পরিচালক শাহিদা আক্তার বলেন, “রস উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের শেকড়ের ঐতিহ্যগুলো টুকরো আকারে হলেও নগরজীবনে ফিরে আসছে। আমাদের সন্তানরা পুরো রস না পেলেও এখানে এসে কিছুটা অন্তত জানতে পারে।”
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের চারুকলার অধ্যাপক আলাউদ্দিন আলী বলেন, দেশের নানা প্রান্তে পাঁচ হাজারের বেশি মেলা হয় প্রতিবছর। বট-পাকুড়ের নিচে খোলা প্রান্তরে এসব মেলার আয়োজন হয়। এসব মেলায় সমবেত হয় ধনী-গরীব, হিন্দু-মুসলমান, ছোট-বড় সবাই। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি আর সখ্যতা বাড়াতে মেলার বিকল্প নেই।
আর ‘রঙ্গে ভরা বঙ্গ’র পরিচালক ইমরান উজ জামান বলেন, “শহুরে বিবর্তনে আমরা আমাদের সংস্কৃতি, কালচার, লোকাচার ও জীবনবোধের অনেক অনুষঙ্গই হারিয়ে ফেলতে বসেছি। বাংলার চিরায়ত লোকাচার ও জীবনবোধ বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের এই প্রয়াস।”
এবারের রস উৎসবে সভাপতিত্ব করেন রঙ্গে ভরা বঙ্গর সভাপতি অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ।