নতুন ২০২০-২০২১ অর্থবছরেও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থছাড় আপাতত স্থগিত থাকছে। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে গত এপ্রিল মাস থেকে উচ্চ ও মধ্যম অগ্রাধিকার প্রকল্পে অর্থছাড় করলেও নিম্ন অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পে অর্থছাড় বন্ধ ছিল। গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ হতে এক পরিপত্রে নতুন অর্থবছরেও এ সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে। এতে বলা হয়েছে, সীমিত সম্পদের ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের উচ্চ/মধ্যম/নিম্ন অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ/ সংস্থাসমূহ উচ্চ অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহ যথানিয়মে বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে। মধ্যম অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহের ক্ষেত্রে প্রকল্পের যে সকল খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হবে সে সকল খাতে অর্থব্যয় করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে যে সকল অর্থনৈতিক কোডের ব্যয় পরিহার করা সম্ভব সে সকল কোডের ব্যয় আবশ্যিকভাবে পরিহার করতে হবে। এছাড়া নিম্ন অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহের অর্থছাড় আপতত স্থগিত থাকবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ এ পরিপত্রের আওতাবহির্ভূত থাকবে বলে জানানো হয়।
এর আগে গত অর্থবছরের এপ্রিল মাসে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে দীর্ঘ ছুটির কারণে অর্থ সাশ্রয়ের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের গতি আনতে অর্থছাড়ের সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) হাতে। অর্থ মন্ত্রণালয় বা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কোনো অনুমোদন বা সম্মতি ছাড়াই সরকারি তহবিলের (জিওবি) অংশের শতভাগ অর্থছাড় করতে পারতেন তারা। তবে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হলে রাজস্ব আদায়ে বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ছুটি এবং করোনা মোকাবিলায় সরকারের অপ্রত্যাশিত অর্থব্যয় অনেক বেড়ে যায়। সার্বিক দিক বিবেচনা করে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য কমগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থছাড় স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উল্লেখ্য ১ জুলাই শুরু হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে নতুন এডিপির আকার বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হলে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সেই প্রভাব এডিপির ওপরেও পড়েছে। বাস্তবায়ন কমে গেছে অনেক। এজন্য নতুন অর্থবছরে চলমান প্রকল্প শেষ করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন খাত। ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে এই খাতটি। এরপরে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাত ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা বিদ্যুত্ খাতে ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাত রয়েছে সাত নম্বরে। এই খাতে বরাদ্দ ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। আর ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা নিয়ে কৃষি খাত অষ্টম স্থানে আছে।