খুব কম সময়ে হিসাব খোলা, অর্থ জমা ও উত্তোলন সেবায় অটোমেশনের মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ ও মেয়াদি হিসাব।
জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক এ প্রক্রিয়া আগামী ১৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার সচিবালয়ে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ ও মেয়াদি হিসাব কার্যক্রম অটোমেশনর জন্য ওয়েবভিত্তিক ডেটাবেইজ সিস্টেম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ প্রক্রিয়ায় হিসাব খোলার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা স্লিপ ও হিসাব খোলার সনদ পাওয়া যাবে। জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক সিস্টেম গ্রাহকের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য যাচাই করে নির্ভুল মুনাফা ও মূল অর্থ পরিশোধ করবে। জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং টিআইএন ব্যবহারের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত অর্থের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অটোমেশনের ফলে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী মুনাফার অর্থ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। গ্রাহক মোবাইল ও ই-মেইলের মাধ্যমে তার হিসাবে জমা, উত্তোলন ও স্থিতির তথ্য জানতে পারবেন।
অর্থ বিভাগ বিদ্যমান সিস্টেম ব্যবহার করে এ অটোমেশন কাজ করেছে এবং এজন্য সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়নি বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
ইতোমধ্যে বহুল প্রচলিত সঞ্চয় স্কিম যেমন পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক, পরিবার ও পেনশন সঞ্চয়পত্রের লেনদেন গতবছর জুলাই থেকে অটোমেশন পদ্ধতিতে করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন রকমের সঞ্চয়পত্র অটোমেশনে চলে গেছি। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই সঞ্চয়পত্র স্কিমটি দেখতে চাই যাদের জন্য করা হয়েছে তারা যেন উপকৃত হন। কারও স্বার্থে আমি হাত দেইনি। এখানে ব্যবসায়ীরা এসে কিনুক আমি চাই না। ডাক ডিপোজিট ও ডিমান্ড ডিপোজিট অটোমেশনে যাব, ১৭ মার্চ সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে শুরু করতে পারব পূর্ণমাত্রায়।”
গ্রামীণ জনগণের সুবিধার জন্য ডাকঘরকে আধুনিক করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “ফিনান্সিয়াল টুলস আমাদের নেই, গ্রামীণ লোকজন কোথায় টাকা নিয়ে যাবে, টাকা কি বালিশের নিচে রাখবে? গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাইলে পোস্টাল বিভাগ আমরা বাতিল করতে পারব না। সবার হাত ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি আবার দাঁড়াবে।”
এ প্রক্রিয়ার মাধ্যেমে কারও সুবিধা হরণ করা হবে না জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “যা করব মানুষের স্বার্থে করব, যা করব সেটি যেন মিসইউজ না হয়। কারো কোনো সুবিধা হরণ করা হয়নি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাবে সুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে।”
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র স্কিমের সুদের হার আগের মতোই থাকছে এবং সঞ্চয়পত্র নতুন যুগে চলে আসছে জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, “একটি নিয়মের মধ্যে আনতে চাচ্ছি, মিসইউজ করুক তা চাই না। যে আয়টা করবে এখান থেকে তা ট্যাক্স ফ্রি না, আয়কর দিতে হবে এজন্য টিন নম্বর ও ন্যাশনাল আইডি নিচ্ছি। এনআইডি নিচ্ছি তাদের চিহ্নিত করার জন্য কত টাকা করল, অতিরিক্ত করল কি না। দেশের যে কোনো জায়গায় করলে লিমিট ক্রস করতে পারবে না এবং ট্যাক্সের আওতায় আসবে। সরকার রাজস্ব আয় করবে।”
টাকার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে এ বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এটি বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে, তারা স্বাধীন সত্তা। অপেক্ষা করুন সব ক্যাশলেইস করে ফেলব।”
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “দুটি কারণে এটি স্মরণীয় মুহূর্ত। বলা হচ্ছিল ডাক বিভাগ এখন কাফনের কাপড় পরে কবরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে এবং উত্থানের আর সুযোগ নেই। কিন্তু আজ এ ঘটনা ভিন্ন চিন্তা তৈরি করেছে। ডাক বিভাগ নিয়ে এটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ডিজিটাল ডাকঘরে রূপান্তরিত হচ্ছে।”
ডাক বিভাগকে ‘ডিজিটাল কমার্স’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, “ডাক বিভাগের মানব সম্পদের মধ্যে ৪৩ হাজার রয়েছে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে তৈরি করা হবে। ডাক বিভাগের তৃণমূল পর্যন্ত নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নিয়ে ডাকবিভাগ থাকতে চায়।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।