বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভসে সংরক্ষিত কোনো নথি ধ্বংস করলে শাস্তি হিসেবে তিন বছরের জেল দেওয়ার বিধান রেখে আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস আইন-২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৮৩ সালের একটি অধ্যাদেশের আলোকে জাতীয় আর্কাইভস চলছিল, আদালতের নির্দেশে ওই অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে।
একজন পরিচালক এই আর্কাইভসের প্রধানের দায়িত্বে থাকলেও প্রস্তাবিত আইনে একজন মহাপরিচালকের পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া একটি পরিচালনা পর্ষদও সেখানে থাকবে।
এছাড়া গবেষণা ও তথ্য গ্রহণের বিষয়টিও নতুন আইনে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান আনোয়ারুল।
তিনি বলেন, “এই আইন প্রণীত হলে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মূল উপাত্ত, সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন দলিল দস্তাবেজ, গেজেট, গেজেটিয়ার, নকশা, আলোকচিত্র, অডিও-ভিজুয়ালসামগ্রী, সাংস্কৃতিক গুণসম্পন্ন মূল্যবান পাণ্ডুলিপি, মানচিত্র, পত্রিকা, চিঠি, প্রতিবেদন, নিবন্ধন, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ নথিপত্র সংরক্ষণ করা যাবে।”
মহাপরিচালক যৌক্তিক মনে করলে যে কোনো রেকর্ড ধ্বংস করে ফেলতে পারবেন বলে খসড়ায় প্রস্তাবনা থাকলেও মন্ত্রিসভা তাতে সায় দেয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভা বলেছে, এটা মহাপরিচালকের ক্ষমতায় থাকবে না। কারণ এদের কাজ হল আর্কাইভ করা, সুতরাং তার কাছে এই ক্ষমতা থাকা যাবে না।”
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি আর্কাইভসে রক্ষিত কোনো রেকর্ড, নথিপত্র, পত্রিকা, মানচিত্র, পাণ্ডুলিপি বা দলিল দস্তাবেজ বিকৃত করে তবে তাকে তিন বছর পর্যন্ত জেল দেওয়া হবে।
ট্যুর অপারেটর আইন অনুমোদন
ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রমকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর (নিবন্ধন ও পরিচালনা) আইন, ২০২০’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বাংলাদেশের পর্যটনখাত একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটররা অন্তর্মুখী ও বিদেশগামী ট্যুর পরিচালনা করে থাকেন।
“এসব ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দেশে প্রচলিত কোনো আইন না থাকায় অনেক সময় পর্যটকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হন।”
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত ট্যুর কার্যক্রম পরিচালনায় ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রমকে আইনের আওতায় পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আনোয়ারুল বলেন, ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডকে সংজ্ঞায়িত করা ছাড়াও নিবন্ধন প্রাপ্তির যোগ্যতা, প্রক্রিয়া, মেয়াদ এবং নিবন্ধন সনদ বাতিলের বিষয়ে বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।
প্রস্তাবিত আইনে নিবন্ধন সনদ ছাড়া ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড পরিচালনায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মৃত্যুবরণ বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে নিবন্ধন সনদ হস্তান্তর এবং কার্যালয় স্থানান্তরের বিধান রাখা হয়েছে।
“পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণার্থে ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডগুলোর অপরাধ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ১৮৯৮ সালের কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর অনুযায়ী বিচারের বিধান রাখা হয়েছে।”
এই আইন প্রণীত হলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের ট্যুর অপারেটরদের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে বলে মত দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, “ট্যুর অপারেটররা সংবিধিবদ্ধ আইনের আওতায় কাজ করলে পর্যটকদের কাঙ্খিত সেবা প্রাপ্তি সহজতর হবে। পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এবং সরকারের রাজস্ব আরও বাড়বে।”