লর্ডসে ২৭৬ রান, ট্রেন্ট ব্রিজে ২৯৮-এর পর আরও একবার প্রায় তিনশর কাছাকাছি রান তাড়া করে জয়। টেস্টের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে যা পারেনি কোনো দল, তাই করে দেখাল ইংল্যান্ড। এক সিরিজে তিনবার আড়াইশর বেশি রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে জয়ের অনন্য কীর্তি গড়ল তারা! দাপুটে পারফরম্যান্সে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল নিউ জিল্যান্ডকে।
হেডিংলি টেস্টের পঞ্চম দিন সোমবার ইংল্যান্ডের জয় ৭ উইকেটে।
কদিন আগে লাল বলের ক্রিকেটে যারা ধুঁকছিল, সেই ইংলিশদের দায়িত্বে অধিনায়ক বেন স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পথচলা শুরু হলো দুর্দান্তভাবে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট উপহার দিয়ে সফরকারীদের তিন ম্যাচেই উড়িয়ে দিল তারা।
শেষ ম্যাচে ২৯৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংলিশরা জয়ের মঞ্চ গড়েছিল আগের দিনই। শেষ দিনে তাদের দরকার ছিল স্রেফ ১১৩ রান, হাতে ৮ উইকেট। বৃষ্টির হানায় প্রথম সেশন ভেস্তে যায়। পরে খেলা শুরু হলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। অলিভার পোপকে হারিয়ে বাকি রান তুলে ফেলে তারা স্রেফ ১৫.২ ওভারে।
মাইকেল ব্রেসওয়েলের অফ স্পিনে চারের পর লং-অন দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন জনি বেয়ারস্টো। টেস্টে ছক্কায় ম্যাচের ইতি টানা! এতেই ফুটে ওঠে কতটা দাপুটে ছিল ইংল্যান্ড।
প্রথম ইনিংসে দলের ভীষণ বিপর্যয়ে ১৬২ রান উপহার দেওয়া বেয়ারস্টো এবার করেন ঝড়ো ফিফটি। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ৪৪ বলে খেলেন ৭১ রানের অপরাজিত ইনিংস।
লর্ডস টেস্টের পর আবারও রান তাড়ায় দলকে পথ দেখান জো রুট। এক ছক্কা ও ১১ চারে ৮৬ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি দলের জয় সঙ্গে নিয়ে। পোপের ব্যাট থেকে আসে ১২ চারে ৮২ রান।
সবাইকে ছাপিয়ে অবশ্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন জ্যাক লিচ। দুই ইনিংসে পাঁচটি করে উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়ে ইংল্যান্ডের জয়ে বড় অবদান রাখেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
সিরিজ সেরার পুরস্কার ওঠে রুট ও ড্যারিল মিচেলের হাতে। ব্যাট হাতে স্বপ্নের মতো সময় কাটানো নিউ জিল্যান্ডের মিচেল তিন সেঞ্চুরিতে করেন সর্বোচ্চ ৫৩৮ রান। দুই সেঞ্চুরিতে ইংলিশ সাবেক অধিনায়কের রান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯৬।
বৃষ্টির কারণে শেষ দিন খেলা শুরু হতে দেরি হয় আড়াই ঘণ্টা। ২ উইকেটে ১৮৩ রান নিয়ে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই টিম সাউদির দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান পোপ। আগের দিনের ৮১ রানের সঙ্গে কেবল ১ রান যোগ করতে পারেন তিনি।
শুরুতে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়বে কী, নেমেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন বেয়ারস্টো। পরের ওভারেই ট্রেন্ট বোল্টকে মারেন দুটি চার। ওই ওভারে দুটি চার মারেন রুটও।
এরপর রুট কিছুটা দেখেশুনে খেললেও বেয়ারস্টো চালাতে থাকেন তাণ্ডব। সাউদিকে চার মেরে ৩০ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন বেয়ারস্টো। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে তিনি গড়েন টেস্টে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটির কীর্তি।
১৯৮১ সালে ভারতের বিপক্ষে দিল্লিতে ইয়ান বোথামের ২৮ বলে করা ফিফটি এখনও টেস্টে ইংলিশদের হয়ে দ্রুততম পঞ্চাশ।
রুট ও বেয়ারস্টোর জুটি শেষ পর্যন্ত আর ভাঙতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। ৮৭ বলে ১১১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তারা দলকে পৌঁছে দেন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাধারীদের পর এবার ইংল্যান্ডের সামনে ভারত চ্যালেঞ্জ। গত বছর স্থগিত হওয়া টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচটি খেলতে যুক্তরাজ্যে আছে ভারত দল। এজবাস্টনে দুই দলের লড়াই শুরু আগামী শুক্রবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৯
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৬০
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩২৬
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৯৬) (আগের দিন ১৮৩/২) ৫৪.২ ওভারে ২৯৬/৩ (পোপ ৮২, রুট ৮৬*, বেয়ারস্টো ৭১*; বোল্ট ১২-২-৬৫-০, সাউদি ১৯-৫-৬৮-১, ব্রেসওয়েল ১৫.২-০-১০৯-১, ওয়্যাগনার ৮-২-৩৩-০)
ফল: ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: জ্যাক লিচ
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ তে জয়ী ইংল্যান্ড
ম্যান অব দা সিরিজ: ড্যারিল মিচেল ও জো রুট