হাইকোর্টে জমা দেওয়া অর্থ পাচারে জড়িত ৪৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দুদকের নিজস্ব অনুসন্ধান ও তদন্তের তথ্য-উপাত্ত স্থান পায়নি-এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, ওই তালিকায় ‘পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত পত্রিকার মাধ্যমে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু দুদকের নিজস্ব অনুসন্ধান ও তদন্তে প্রমাণিত অর্থ পাচারকারীদের তথ্য সেখানে উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে দুদকের দেওয়া ৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুজনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলমান ও মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা তদন্তাধীন। বাকি ৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র।
রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের বেঞ্চে অর্থ পাচারে জড়িতদের ওই তালিকা জমা দেয় দুদক।
জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান যুগান্তরকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়। কোনো জায়গা থেকে একটা তথ্য পেলেই মামলা করার মতো বড় কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত হওয়া যাবে না। হাইকোর্টে দেওয়া তালিকায় দুদকের নিজস্ব অনুসন্ধান ও তদন্তে প্রমাণিত অর্থ পাচারকারীদের তথ্য দেওয়ার সুযোগ ছিল কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতে দেওয়া নামগুলোর ওপর এখনো পর্যন্ত তেমন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সুযোগ হয়নি। পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে আসা ব্যক্তিদের সম্পদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে দুদকের সাবেক ডিজি বা মহাপরিচালক (লিগ্যাল) ও সাবেক জেলা জজ মো. মঈদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দুদক নিজস্ব অনুসন্ধানের ব্যবস্থা করে মামলা করবে। এরপর তারা সেই অর্থ পাচারকারীদের তালিকা আদালতে দেবে। দুদক কোনো তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান নয়। ইতোপূর্বে দুদক নিজস্ব অনুসন্ধান ও তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারকারী হিসেবে তথ্যপ্রমাণ পেয়ে মামলা ও চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে, হাইকোর্টে তাদের তালিকা দেওয়া ছিল যৌক্তিক। কিন্তু দুদক যাদের তালিকা দিয়েছে, তারা সবাই অর্থ পাচারে সম্পৃক্ত কিনা-এ বিষয়ে দুদকের কাছে তথ্য-প্রমাণ নেই। পত্র-পত্রিকা স্টাডি করে নামগুলো সংগ্রহ করে দিয়েছে মাত্র। এটা কমিশনের দায়িত্বশীল কাজ হয়নি। শুধু পত্র-পত্রিকা পর্যালোচনা করে দুদকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান রিপোর্ট দিলে যাদের বিরুদ্ধে রিপোর্টটি যায়, তাদের ওপর কোনোরকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই এক ধরনের কালিমা দেওয়া হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন সময় সরকারি বড় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের অর্থ পাচারের তথ্য আমরা দুদকের বরাদ দিয়েই পেয়ে থাকি। শুধু সেকেন্ডারি সোর্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যই নয়, বরং দুদকের নিজস্ব অনুসন্ধান ও তদন্তে প্রমাণিতদের নামও তালিকায় থাকাটা প্রত্যাশিত ছিল।