জামিনে মুক্তির পরও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কায় ভুগছেন অমানুষিক নির্যাতনের শিকার কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানসহ তার পরিবারের সদস্যরা।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে আরিফুলের শারীরিক চিকিৎসা চললেও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা সেখানে নাই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক।
সোমবার কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আরিফের পাশে বসে তার স্ত্রী নিতু বলেন, আমার স্বামীর শারীরিক অবস্থা এখনও খারাপ। সে হাঁটা চলা করতে পারছে না। আমার ছোট ছোট দুটো বাচ্চা আছে।
“আমরা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি।”
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আরিফুলের নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন।
এ সময় শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার ছাপ নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্যাতনের শিকার আরিফ।
গত শুক্রবার মাঝরাতে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের বাড়িতে হানা দেয় প্রশাসন। তুলে এনে সে রাতে তাকে বিবস্ত্র করে চোখ বেঁধে মারধর করার অভিযোগ করেন রোববার জামিনে মুক্ত হয়ে আরিফ। মদ ও গাঁজা রাখায় দায়ে জরিমানা ও এক বছরের সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছিল সে রাতের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আরিফকে সাজা দেওয়ার পর দেশ জুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করে দ্রুত পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চাপের মুখে আরিফ জামিনে মুক্তি পান। তদন্তে আরিফের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রমাণ পাওয়ায় সোমবার কুড়িগ্রামের সেই জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভিনকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া ওই আদেশে একই সঙ্গে তার এ কাজের সঙ্গী জেলা প্রশাসকের কার্যায়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়েছে।
জামিনে মুক্ত হয়ে নির্যাতনের শিকার আরিফ অভিযোগ করেছিলেন,‘দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেই আরডিসি নাজিম উদ্দিন আমার মাথায় কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। এক সময় নাজিম তাকে বলেন, “বড় সাংবাদিক হয়ে গেছিস। তোর সাংবাদিকতা ছোটাবো।”
তিনি জানান, তাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে উঠিয়ে তাকে বলা হয়,“এর চোখ বাঁধো। এর দিন শেষ। একে আজই এনকাউন্টারে দেবো।”
“আমাকেও তিনি (আরডিসি নাজিম উদ্দিন) বারবার বলেন, ‘তুই কলেমা পড়ে নে, তোকে এনকাউন্টারে দেওয়া হবে।’
পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে বলেও অভিযোগ করেন আরিফ।
ভয়াবহ অবস্থান মধ্যদিয়ে যাওয়া সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান জানান, রোববার হাসপাতালে ভর্তি হবার পর থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওষুধপত্র খাওয়ার পর এখন কিছুটা শারীরিক উন্নতি হয়েছে তার।
তবে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আাবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস সজীব জানান, আরিফুলের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আপাতত নেই। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
রেদওয়ান জানান, শারীরিক অবস্থার আর একটু উন্নতি হলে তাকে মানসিক কাউন্সিলের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। তবে এই হাসপাতালে মানসিক চিকিৎসার সুবিধা নাই।