নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভূমিকা ইতিবাচক হলে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সহজ হবে। এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা ফিলিস্তিন সংকটের মতই নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত বড় সংকটের জন্ম দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন।
সোমবার ‘ডিক্যাব টকে’ অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্যের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। যুক্তরাজ্য বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পক্ষে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন কিনা সেটা তার নিজের এবং যুক্তরাজ্যের আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে।
রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’র আয়োজন করে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব।
সংগঠনের সভাপতি রাহীদ এজাজ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিক্যাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব।
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার স্বাগত বক্তব্যের পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ডিকসন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে আগ্রহী। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে আছে এবং নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্তের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। কিন্তু এ সংকটটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংকট। এ কারণে এ সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই এগিয়ে আসতে হবে। রাখাইনে গণনিষ্ঠুরতার বিচার এবং বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত পাঠাতে নিরাপত্তা পরিষদে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণের জন্য যুক্তরাজ্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। প্রস্তাবটি কেন গৃহীত হচ্ছে না, সেটা সবাই জানে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদ্য চীন সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং সহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। এখন নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভূমিকা ইতিবাচক হলে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সহজ হবে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। প্রথমত, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে নিরাপদ ও বসবাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাদের রাখাইনে নাগরিকত্ব দিতে হবে এবং তাদের রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে।
রোহিঙ্গা সংকট যত দীর্ঘ হবে ততই উদ্বেগ বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, ফিলিস্তিন সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রেও রয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ব সূচকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫০ এবং যুক্তরাজ্যের ৩৩। যুক্তরাজ্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং পরিস্থিতির আরও উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নের চেষ্টা করা উচিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বেশ কিছু চমৎকার বিতর্ক দেখা যায়, ভাল কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ হতে দেখা যায়। এটা ইতিবাচক। কিন্তু একইসঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক আইন এবং এ কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হওয়া এবং সাংবাদিকদের ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হওয়া নিয়েও কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্বেগ আছে।
বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত ও লন্ডনে বসাবাসরত তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে কিনা জানতে চাইলে ডিকসন বলেন, যুক্তরাজ্যের ভেতরে যারা বাস করেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে যুক্তরাজ্য সরকার। তারেক রহমান দেশে ফিরবেন কিনা সেটা তার নিজের এবং যুক্তরাজ্যের আদালতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে।
বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ‘এজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬। সূচকের এ অবস্থান বিবেচনায় নিয়েই যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, সম্পর্ক বৃদ্ধির এ বিষয়টিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেই ব্রেক্সিটের পরও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা বহাল রেখেছে।
অদূর ভবিষ্যতে দু’দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যনীতি গ্রহণের বিষয়টিও বিবেচনায় আছে বলে জানান তিনি।