নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগই যদি সরকারে থাকে, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে রোববার দলের এই অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা আগেই বলেছি, এই নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। মাথা ব্যথা এটা নিয়ে যে, নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারে কারা থাকবে?
“যদি আওয়ামী লীগ সরকারে থাকে, নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন কোনো নির্বাচন হবে না। কারণ তারা আবার তাদের মত করে একই কায়দায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে; আর আমরা বসে বসে দেখব। আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না।”
বিএনপি মহাসচিব আবারও বলেন, “আমাদের দাবি নির্বাচন কমিশন নয়, সার্চ কমিটি নয়; আপনার তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
“এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ওই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নির্বাচন কমিশন তৈরি করে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শনিবার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন ইসি গঠন করে দিয়েছেন; এই কমিশনের নেতৃত্বেই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
নতুন কমিশনে সদস্য হিসেবে আছেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এমিলি এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।
এ কমিশন সম্পর্কে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, তাদের পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে এদেশের জনগণের ভোটের যে অধিকার, ভোটের অধিকার তাকে সুনির্দিষ্ট করা, তারা যেন ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা। এটা তাদের দায়িত্ব এবং একটা প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে- এ রকম একটা পার্লামেন্ট, এ রকম একটা সরকার গঠন করা। কিন্তু আমরা কী দেখেছি- ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ ওই ব্যবস্থাটাকে ধবংস করে দিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগের আন্দোলন করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ফখরুল বলেন, “দাবিটা তাদেরই ছিল- এই কথাটা আপনারা বলেন। আমরা এটা মেনে নিয়েছিলাম যে, এটা জনগণের একটা আকাঙ্ক্ষা।
“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনও জনগণের বিরুদ্ধে যাননি, তিনি এটাকে মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন, তার অধীনে তিনটা নির্বাচন হয়েছে- একটা প্রশ্ন করেনি। যখনই তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় এল, দেখলো যে কিছুতেই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যদি থাকে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না, জনগণ তাদের আর ভোট দেবে না।”
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ প্রতিটি মানুষ, এই যে রিকশাওয়ালা, এই যে ফল বিক্রি করছে, এই যে মাছ বিক্রি করছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন- তারা বলে এই আওয়ামী লীগের হাত থেকে আমরা কবে মুক্তি পাব?
“গোটা সমাজকে তারা ধবংস করে দিয়েছে, গোটা সমাজের মধ্যে বিভাজন সৃষ্ট করেছে। যেখানে যাবেন ভাগ ভাগ ভাগ। চাকরি পাবেন না যদি আওয়ামী লীগের ছাপ না থাকে। নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। আমরা আগেই বলেছি এই সম্পর্কে কেনো আমাদের ওপর চাপ দেন? এই কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।”
সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে সদস্য দেবাশীষ রায় মধুর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, সুশীল বড়ুয়া বক্তব্য দেন।