অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা মালির বিদ্রোহী সেনারা ‘উপযুক্ত সময়ে’ একটি স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গত জুলাই থেকে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলছে। ওই সময় শুরু হওয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভের সুযোগে মঙ্গলবার দেশটির সেনাবাহিনীর একটি অংশ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বৌবাকর কেইতাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে।
বিদ্রোহী সেনারা মঙ্গলবার বিকালে মালির প্রেসিডেন্ট ভবনে হানা দেয় এবং অস্ত্রের মুখে কেইতা ও প্রধানমন্ত্রী বুবু সিসাসহ আরো কয়েকজনকে রাজধানী বামাকোর নিকটবর্তী একটি সামরিক শিবিরে ধরে নিয়ে যায়। তার কয়েক ঘণ্টা পর রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে কেইতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং সরকার ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
প্রেসিডেন্ট ভবনে হানা দেওয়ার আগে বিদ্রোহী সেনারা রাজধানীর কাছের কাতি শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
বিবিসি আফ্রিকার বামাকো প্রতিনিধি আবদুল বা তখন জানিয়েছিলেন, কাতি শিবিরের উপপ্রধান কর্নেল মালিক দিয়াও ও আরেক কমান্ডার জেনারেল সাদিও কামারা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বামাকো থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের এই শিবিরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বিদ্রোহীরা রাজধানীতে যায়। উল্লসিত জনতা সেখানে তাদের স্বাগত জানায়। কেইতার পদত্যাগের দাবিতে আগে থেকেই সেখানে বিক্ষোভ চলছিল।
এদিকে, মালিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর ফ্রান্স এবং আঞ্চলিক অন্যান্য শক্তি এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা এ রাজনৈতিক সংকটের দ্রুত সমাধান চায়।
মালিতে ইসলামপন্থি জঙ্গিদের একটি দল অত্যন্ত সক্রিয়। এখন এ অভ্যুত্থান দেশটির ভবিষ্যত কে অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ক্ষমতা থাকা কেইতার পতন শুধু মালিতে নয় বরং পশ্চিম আফ্রিকার পুরো সাহল অঞ্চলে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওই অঞ্চলের ১৫টি দেশ নিয়ে গঠিত দ্য ফিফটিন-নেশন ইকনোমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকা স্টেটস (ইসিওডব্লিউএএস) তাদের সংস্থা থেকে মালিকে বরখাস্ত করেছে।
মালির নিয়ন্ত্রণে বিদ্রোহীরা, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ
অন্যদিকে, দ্য আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা মালিতে দ্রুত বেসামরিক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
নানা দেশ থেকে মালির সোনার খনিতে বিনিয়োগকারীরাও সেনা অভ্যুত্থানের পর নিজেদের শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন।
এদিকে, বিদ্রোহী সেনারা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতার দখল নিলেও এখনো নিজেদের নেতা বেছে নিতে পারেনি। রাজধানী বামাকোতে গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে।
বিদ্রোহী সেনাদের একজন মুখপাত্র বুধবার বলেন, তারা ভবিষ্যতে আরো বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য এবং নিরাপত্তাহীন’ অবস্থার তৈরি হওয়া আটকাতে এ কাজ করেছেন।
এর আগে বুধবার ভোরে বিদ্রোহী সেনাদের হয়ে কর্নেল ইসমাইল ওয়াগুই রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক ভাষণে বলেছিলেন, “আমরা ক্ষমতা চাই না, কিন্তু আমরা দেশে একটি স্থিতিশীল অবস্থা দেখতে চাই। যাতে আমরা যুক্তিযুক্ত সময়ের মধ্যে একটি সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করতে পারি।
তিনি মালির নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনে সহায়তার আহ্বানও জানিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত তার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
জি৫ সাহল গ্রুপের নেতারা মালির জনগণকে ধৈর্যের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে এ সংকটের সমাধান করতে এবং কেইতাকে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।