ভোটারদের ‘নির্বাচন বিমুখতা’ গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক মন্তব্য করে এর কারণ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও জাতীয় যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
উপজেলা পরিষদে সদ্য অনুষ্ঠিত দুই পর্বের নির্বাচনে ভোটারদের কম অনুপস্থিতির চিত্র তুলে ধরে দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদে নির্বাচনে সমস্ত দলের অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন কী অংশগ্রহণমূলক হয়েছে? সব দল কী সেখানে আছে?
“সরকারকে ভাবতে হবে আজকে উপজেলা নির্বাচন কেন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। তারপর ভোটারদের অনুপস্থিতি অনেক জায়গায় কম দেখা গেছে।”
এবার পাঁচ ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে দুই ধাপে ভোটগ্রহণ হয়েছে। রোববার (২৪ মার্চ) তৃতীয় ধাপে শতাধিক উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠিত দুই ধাপের ভোটের তুলনামূলক চিত্র দেখা গেছে, গত সোমবার দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা প্রথম ধাপের চেয়ে কম। গত ১০ মার্চ প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে গড়ে ৪৩.৩২ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
প্রথম দুই ধাপে ভোটারদের তুলনামূলক কম উপস্থিতির কারণে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে ভোটের উত্তাপ সেভাবে দেখা যায়নি।
বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনে এবারের উপজেলা নির্বাচন জৌলুসহীন হয়ে পড়েছে বলে খোদ একজন নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকেই মন্তব্য এসেছে।
বদরুদ্দোজা বলেন, “ভোটাররা কেন অংশগ্রহণ করছে না, এই প্রশ্নের উত্তর বের করতে হবে। যদি আমরা উদাসীন হয়ে যাই, চিন্তা না করি, তাহলে আমার আশংকা যে, ভোটাররা যদি নির্বাচন বিমুখ হয়ে যায়, গণতন্ত্র অনেক বিপদে পড়বে। দেশের মানুষ যদি ভোট দিতেই না যায়, তার চেয়ে বড় বিপদ আর কিছু হতে পারে না।”
উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে গত ১৮ মার্চ রাঙামাটির এই কেন্দ্রটির মতো কিছু কেন্দ্র ছিল ভোটারশূন্য
উপজেলা নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “দলের মধ্যে নেতৃত্বের লড়াই হচ্ছে- একজন দলীয় মনোনীত প্রার্থী, এক বা একাধিকজন বিদ্রোহী প্রার্থী। এই প্রতিযোগিতা কাদের মধ্যে ? দলের মধ্যে, এক দলের প্রার্থী। এটা কী একদলীয় নির্বাচন হয়ে গেল না? প্র্যাকটিক্যাল হতে হবে। একইভাবে শুধুমাত্র দল সীমাবদ্ধ নির্বাচন কতখানি দেশে গ্রহণযোগ্য হবে এটা ভাবতে হবে। তাই বলব, কেন একরম হচ্ছে- এটা দেখতে হবে।“এগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। আমরা যে রাজনীতি করি, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করি, আমরা কী উদাসীন হয়ে থাকব এসব প্রশ্নে? এটা হতে পারে না। এটা দেশের জন্য মঙ্গল নয়।”
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিরোধী দল প্রয়োজন উল্লেখ করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, “বিরোধী দলকে রাজনীতি করতে দিতে হবে, বিরোধী দলের রাজনীতি নিশ্চিত করতে হবে। এই দায়িত্ব শুধু বিরোধী দলের নয়, এই দায়িত্ব সরকারের। এই সরকার ভালো ও সুন্দর সরকার, জনগণের মঙ্গলকজনক আকাঙ্ক্ষার সরকার, একটি গণতান্ত্রিক সরকার, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সরকার। তাদেরকে ভাবতে কিভাবে বিরোধী দলকে রাজনীতির সুযোগ করে দেওয়া যায়।”
বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, “পৃথিবীর সমস্ত গণতান্ত্রিক সরকার যে দেশে হয়েছে সেদেশে বিরোধী দলের রাজনীতি আছে। বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র সম্পূর্ণ হয় না। এটা আংশিক গণতন্ত্র, যেটা ইনকমপ্লিট ডেমোক্রেসি। কমপ্লিট ডেমোক্রেসি অর্থা সত্যিকার গণতন্ত্রের স্বার্থে আমাদের দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা নিশ্চয়ই থাকতে হবে। সরকারকে বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে গভর্নমেন্ট ইজ দ্য ইম্পরটেন্ট অথরিটি যেখানে, সরকার ভবিষ্যতে সমালোচিত হবে।”
গণতন্ত্র স্বরূপ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “কী চেহারায় আমরা বলব যে, গণতন্ত্র আছে। সংসদের দিকে তাকাতে হবে। সেখানে যেন মনে হয়, গণতন্ত্র আছে। মাননীয় স্পিকার সংসদ পরিচালনার সময়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবেন এবং সেখানে অসংসদীয় উচ্চারণ বন্ধ করতে হবে, ঘৃণা বক্তব্য প্রত্যাহার করতে করতে হবে।
“একইভাবে রাজপথে আমরা দেখব, যেখানে বিরোধী দল রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে, সংবাদপত্রের দিকে তাকাব সেখানে বিরোধী দলের নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তাদের বক্তব্য থাকবে। টেলিভিশনের দিকে তাকাব, যেখানে শুনব তারা সরকারের পাশাপাশি তাদের বক্তব্য আছে। একে অপরের রাজনীতিকে শ্রদ্ধা করতে হবে।”
আগামী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে জোটের নেতাকর্মীদের আহ্বান তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক আবদুস সালাম হলে জাতীয় যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ শরীয়াহ আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
সংগঠনের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ মাসুদ বিল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএলডিপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান হামদুল্লাহ আল মেহেদি, এনডিপির মহসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসা, শরীয়াহ আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা গাজী মাসউদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।