আবাসন ব্যবসায়ী নূর আলীর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে সোনারগাঁওয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার কৃষিজমি, নিম্নভূমি, জলাভূমি ও মেঘনা নদীর অংশের জমি ভরাটকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
জনস্বার্থে করা এক রিট মামলায় এ সংক্রান্ত জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ রায় দেয়।
রিট আবেদনের পক্ষে আদালতে রুল শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। নূর আলীর দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম ও আইনজীবী আবু তালেব।
রায়ের পর রিটকারী আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভরাট করা জমির মাটি অপসারণ করে ছয় মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে রায়ে।
“এখন থেকে ইকোনমিক জোন করতে আগ্রহীদের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার আগে নদী রক্ষা কমিশন থেকে অনাপত্তি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে বলা হয়েছে রায়ে।”
তিনি বলেন, এই রায়ের ফলে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি ও সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের নামে গৃহীত সকল কার্যক্রম অবৈধ বিবেচিত হবে।
সোনারগাঁও ইকোনমিক জোনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মেঘনা নদীর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছাকাছি ওই এলাকার ৪৫০ একর জমিতে আবাসন ব্যবসায়ী নূর আলীর ইউনিক প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ করছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে ২০১৪ সালের ২ মে হাই সোনারগাঁও উপজেলায় এই রিসোর্ট সিটি নির্মাণে রুলসহ নিষেধাজ্ঞা দেয়।
অনুনোমোদিতভাবে তথাকথিত সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটির জন্য ইউনিক প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টের মাটি ভরাট বন্ধ করে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জেনপুর, ছয়হিস্যা, চরভাবানাথপুর, ভাটিবান্ধা ও রতনপুর মৌজার কৃষি জমি, জলাভূমি, নিচু ভূমি রক্ষায় কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
পাশাপাশি ইউনিক প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কেন গ্রামবাসীর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানাতে বলা হয়।
রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাটি ভরাট বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। এই আদেশ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম-পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এছাড়া মেঘনা নদীর চরভবানাথপুর ও ভাটিবান্ধার অংশ বিশেষসহ কৃষি জমি, জলাভূমি ও নিচু জমিতে ভরাট করা মাটি ও বালি অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয় আদালত, যাতে সংশ্লিষ্ট জমি তাদের মূল অবস্থায় ফিরে যায়।
ওয়েসবাইট থেকে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটির সব বিজ্ঞাপনও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলে আদালত।
পরে প্রতিষ্ঠানটি বেজার কাছ থেকে ইকোনোমিক জোন স্থাপনের অনুমোদন দেখিয়ে সংশোধিত আবেদন করলে আদালত আগের নির্দেশনা সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়।
এরপর হাই কোর্টের ওই সংশোধিত আদেশ স্থগিতের জন্য আপিল বিভাগে যায় বেলা। তাদের আবেদন শুনে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ ৬ সপ্তাহের মধ্যে মূল রুলটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি সংক্রান্ত হাই কোর্টের আদেশটিও স্থগিত করে দেয়।
তারই ধারাবাহিকতায় চূড়ান্ত রুল শুনানির পর বুধবার রায় হল।