নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

66338142_433812577471126_8946695371837407232_n

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে বরগুনা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পূর্ব বুড়িরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নয়নের মৃত্যুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বরগুনার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোর রাত ৪টার দিকে বরগুনা সদর থানার পুলিশ নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তারের জন্য ওই গ্রামে যায়। ওই গ্রামের খলিল মাস্টারের বাড়ির সামনে গেলে নয়ন বন্ড ও তাঁর সহযোগীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে নয়ন নিহত হন। হামলায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়াসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পূর্ব বুড়িরচর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল বারেক ও কবির হোসেনের তথ্যমতে, ভোর রাত সোয়া ৪টার দিকে তাঁরা বেশ কিছু গুলির শব্দ শুনতে পান। এতে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। ভোর ৫টার দিকে তাঁরা খলিল মাস্টারের বাড়ির দরজার সামনে বাঁধের ঢালে এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ তাঁর লাশ ঘিরে রেখেছিল।

বরগুনার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন  বলেন, সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড পালিয়ে ওই এলাকায় অবস্থান করছেন—এমন তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পূর্ব বুড়িরচর গ্রামে অভিযান চালায়। পুলিশের অবস্থান টের পেয়ে নয়ন ও তাঁর সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছুড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে একজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এটা নয়ন বন্ডের লাশ বলে স্থানীয় লোকজন শনাক্ত করে।

ওসির তথ্যমতে, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি তাজা গুলি, তিনটি রামদা ও তিনটি গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে বরগুনা নিয়ে আসা হচ্ছে।

গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফ নামের এক তরুণকে। এ সময় বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা তাঁর স্বামীকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালান। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাঁকে (রিফাত) উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। বিকেল তিনটার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। জনবহুল এলাকায় এমন নৃশংস হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের ঝড় ওঠে।

পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে নিহত রিফাতের বাবা বরগুনা সদরের বড় লবণগোলার বাসিন্দা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় বরগুনা শহরে চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড এবং তার সহযোগী রিফাত ফরাজী ও তাঁর ছোট ভাই রিশান ফরাজীসহ ১২ জনকে আসামি এবং আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এ মামলায় সোমবার পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে চন্দন (২১), মো. হাসান (১৯), অলিউল্লাহ (২২) টিকটক হৃদয় (২১) এজাহারভুক্ত আসামি। ঘটনার পরের দিন সকালে চন্দনকে, সন্ধ্যার মো. হাসান গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার বরগুনা থেকে অলিউল্লাকে (২২) এবং ঢাকা থেকে টিকটক হৃদয়কে (২১) গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য পাঁচজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁরা হলেন নাজমুল ইসলাম (১৮), সাগর (১৯), তানভীর (২২), কামরুল হাসান ওরফে সাইমুন (২১)। অপর একজনের নাম পুলিশ প্রকাশ করেনি।

গতকাল সোমবার বিকেলে এই মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি অলিউল্লাহ ওরফে অলি ও তানভীর হোসেন ১৬৪ ধারায় বরগুনার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বিকেলে বরগুনার বিচারিক হাকিম সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে ওই দুই আসামিকে উপস্থিত করে তাদের দুজনের এই জবানবন্দি নেওয়া হয়। অলিউল্লাহ রিফাত হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি তাঁকে রোববার গ্রেপ্তার হয়। অপর আসামি তানভীর সন্দেহভাজন আসামি। সে মূল আসামি নয়ন বন্ডের সন্ত্রাসী দল ০০৭-এর সক্রিয় সদস্য।

তবে মামলা প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেও প্রধান অপর দুই আসামি রিফাত ফরাজী ও তার ছোট ভাই রিশান ফরাজী এখনো পলাতক।

Pin It