পদোন্নতি নিয়ে এ কী কাণ্ড

Samabay-5d24e9a7c35e6-5d24ef46b2722

বিভাগীয় মামলার (ডিপি) অজুহাতে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পদোন্নতিবঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে সমবায় অধিদপ্তরে। অতিরিক্ত নিবন্ধক, যুগ্ম নিবন্ধক ও উপ-নিবন্ধক পদে এসব পদোন্নতি ঘটেছে। কী কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে, তা বঞ্চিত কর্মকর্তারা চেষ্টা করেও জানতে পারেননি। কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশও পাননি তারা। এসব কর্মকর্তার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও রয়েছেন।

মেধাক্রম ও জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার এ ঘটনায় ত্রুটিপূর্ণ কার্যপত্র তৈরির অভিযোগও উঠেছে। সমবায় অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়েছেন বিভাগীয় মামলা সাজাতে। এ ক্ষেত্রে নেপথ্য থেকে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা। গতকাল মঙ্গলবার তিন স্তরের পদোন্নতি দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এ ঘটনায় সমবায় অধিদপ্তরের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব কামাল উদ্দীন তালুকদার বলেন, তিন স্তরের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই পদোন্নতি হয়েছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে, তাদের পদোন্নতি বিবেচনায় আনা যায়নি। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আকস্মিকভাবে কোনো বিভাগীয় মামলা করা হয়নি, যা হয়েছে বিধিবিধান অনুযায়ীই হয়েছে।

বিসিএস (সমবায়) ক্যাডারের অতিরিক্ত নিবন্ধক, যুগ্ম নিবন্ধক ও উপ-নিবন্ধক পদে পদোন্নতির জন্য গত ৬ ডিসেম্বর বোর্ডের সভা ডাকা হয়। সভায় শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা উপস্থাপন করা হয়। এ সময় মেধাক্রম ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিয়ে পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত হয়। নিয়োগবিধি অনুযায়ী, সমবায় অধিদপ্তর থেকে শূন্য পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে পাঠানো হয়। এ জন্য জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী অতিরিক্ত নিবন্ধক পদে ৬, যুগ্ম নিবন্ধক পদে ২০ ও উপ-নিবন্ধক পদে ১২ কর্মকর্তার নাম বাছাই করা হয়। এ তালিকা বিভাগীয় পদোন্নতি বোর্ডের সভায় উপস্থাপন করা হয়।

জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের আমলনামা পর্যালোচনা করা হয়। সর্বশেষ গত ২ জুলাই পদোন্নতি বোর্ডের সভার আগে পদোন্নতিযোগ্য অনেকের নামে বিভাগীয়

মামলা সাজানো হয়। এ সভায় এসব মামলার জন্য প্রস্তুত করা ত্রুটিপূর্ণ কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এর বিরোধিতা করলেও তা আমলে নেননি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা। উল্টো মেধাক্রমে জুনিয়র হলেও তার পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত বিভাগীয় পদোন্নতি বোর্ডের (ডিপিসি) কার্যপত্রে মোট ১০টি কলাম ছিল। এবার ১৬টি কলাম দিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে অনেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমবায় সমিতি নিবন্ধন ও বিধিবদ্ধ রুটিন কাজের জন্য বেনামি অভিযোগ এনে গোপনে ভিত্তিহীন প্রতিবেদন তৈরি করে দুদকে পাঠানো হয়। এসব প্রতিবেদন পরে ফেরত এনে দশম সংসদের ‘সংসদীয় কমিটির পত্র’ হিসেবে অপব্যাখ্যা দিয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ফাঁসানো হয়।

অতিরিক্ত নিবন্ধক হিসেবে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- যুগ্ম নিবন্ধক আবুল হোসেন, আবু তাহের চৌধুরী, খোরশেদ আলম প্রমুখ। যুগ্ম নিবন্ধক পদে বঞ্চিতরা হলেন- উপ-নিবন্ধক কাজী ছিবাহ উদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান, নবীরুল ইসলাম প্রমুখ। উপ-নিবন্ধক পদে বঞ্চিত হয়েছেন শেখ ফজলুল করিমসহ ছয়জন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সরকার সমর্থক পরিবারের সন্তান।

অভিযোগ রয়েছে, সিনিয়র স্কেল পাস করতে না পারলেও মেধাক্রম তালিকায় সবচেয়ে নিচে থাকা যুগ্ম নিবন্ধক রুহুল আমিনকে অতিরিক্ত নিবন্ধক পদে উন্নীত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আটটি সমবায় সমিতির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অথচ যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতা থাকার পরও মেধাক্রমে এক নম্বরে থাকা আবুল হোসেনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। পদোন্নতি পাওয়া জুনিয়র এই কর্মকর্তা তার তথ্য গোপন করে কার্যপত্রে কলাম পূরণ করে সেখানে নিজেই স্বাক্ষর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পদোন্নতি পাওয়া রুহুল আমিনের নিয়োগ ও ক্যাডারভুক্তি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে (মামলা নং-৭৫৪৮/১৮)। এর পরও কেন তাকে পদোন্নতি দেওয়া হলো, তা নিয়ে সমবায় ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

Pin It