আগামী বছরের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার কথা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলে এলেও মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় চাইছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনে করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হওয়াকে সময় বাড়ানোর কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পদ্মা নদীর উপর বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণে কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি ও ট্রেন চলাচল শুরুর লক্ষ্য থাকলেও মাঝে হানা দেয় করোনাভাইরাস মহামারী।
তবে মহামারীর মধ্যেও কাজ সচল রেখে সবগুলো স্প্যান বসানোর পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সেতুর নির্মাণ কাজের শতকরা ৮৪ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে যানবাহন চলাচল হবে।
কিন্তু এর মধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আবেদন গেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ও পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সেতু বিভাগ চিঠি পাঠিয়েছে, আমরা পেয়েছি।
“কিন্তু প্রকল্পটি বর্তমানে সার্বিক কোন অবস্থায় আছে, তা দেখে আইএমইডি একটি প্রতিবেদন দেবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।”
কোনো প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া সংশোধন করতে চাইলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন না করে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অনুমোদন করতে পারে। তাই এই প্রকল্পটিও ভৌত অবকাঠামো বিভাগ অনুমোদন দিতে পারে।
আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “আমরা সেতু বিভাগ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। তবে মেয়াদ বাড়ানোর মূল কাজটি করবে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।”
আইএমইডি ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সরেজমিনে জেনে এসেছি যে গত এক বছর ধরে করোনাভাইরাসের কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সুপারিশও মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে যেতে পারে।”
সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী পদ্মা বহুমুখী (সড়ক-রেল) সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেতু বিভাগের আবেদনে মেয়াদ দুই বছর বাড়লেও এই ব্যয়ের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ হবে।
প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সেতু বিভাগের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে গত ২ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সেতু বিভাগের উপসচিব রাহিমা আক্তারের চিঠিতে বলা হয়, নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ৮৩ শতাংশ শেষ হয়েছে।
“অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে এক বছরের ডিফেক্ট নোটিফিকেশন পিরিয়ডসহ ৩০ জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।”
মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের কারণ তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের মার্চ মাসে দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর কাজ ব্যাহত হয়েছে।
“প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি পরামর্শক ও চীনা ঠিকাদারের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন নিজ নিজ দেশের বিধি-নিষেধের কারণে অনেক দিন ধরে প্রকল্পে আসতে পারেননি। এছাড়াও যারা প্রকল্পের সাইটে অবস্থান করছিলেন, তাদের মধ্যেও কোভিড ভীতি সঞ্চার হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর প্রভাব পড়েছে।”
গত বছরের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়াও কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, তীব্র স্রোতের কারণে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ভাঙনের কবলে পড়ে। তার ফলে ১২৫টি রোডওয়ে স্ল্যাব এবং ১৯২টি রেলওয়ে স্ট্রিংগার নদীগর্ভে চলে যায়।