ভারত সফর বাতিল করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
দিল্লি ডায়ালগ ও ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগ উপলক্ষে তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। তার আগে দুপুরে হঠাৎ করেই এই সফর বাতিলের কথা জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার আমন্ত্রণে শুক্রবার সকাল ১১টায় সিলেটের তামাবিল হয়ে মেঘালয়ে যাওয়ার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। তার আগের দিন রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু মন্ত্রীর এই সফর স্থগিতের কথা জানান।
ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে সহিংস বিক্ষোভের মধ্যেই বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর দেশটি সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত এলো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি দিল্লি যাচ্ছি। সেখানে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানে আমি ‘কী নোট স্পিকার’ হিসেবে বক্তব্য রাখব।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লি ডায়ালগ (একাদশ চ্যাপ্টার) এবং ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগের (চতুর্থ চ্যাপ্টার) যৌথ অধিবেশনে মন্ত্রী-পর্যায়ের সভায় অংশ নিয়ে বক্তৃতা করার কথা ছিল তার।
কিন্তু সফর বাতিলের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, “আগামী ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরে আমাদের বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান রয়েছে। সেজন্য তার দেশে থাকা জরুরি। সেজন্য তিনি সফর বাতিল করেছেন।”
তৌহিদ বলেন, জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এখন মাদ্রিদে রয়েছেন। আর ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানির কারণে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক রয়েছেন নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে।
এ পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানিয়ে তৌহিদ বলেন, এবারের দিল্লি সফরে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মন্ত্রণালয়ের আমেরিকাস উইংয়ের মহাপরিচালক ফেরদৌসী শাহরিয়ার।
ভারতের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটি সহনশীল দেশ। যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে, এবং সেখান থেকে পদস্খলন হলে ভারতের যে ঐতিহাসিক অবস্থান, সেটা দুর্বল হবে বলে আমি মনে করি।”
লোকসভায় বিল তুলতে গিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার অনেকগুলো সঠিক নয় বলে দাবি করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এ ব্যাপারে যে কথা উঠেছে, এটার অনেকগুলো ঠিক না। আমাদের দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি অনেক বেশি, আমাদের দেশে ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সকলের। আমাদের দেশে অন্য ধর্মের লোক কেউ নিপীড়িত না।”
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রতিবাদে দুদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে। বৃহস্পতিবারও সেখানে কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমেছে হাজারো জনতা। পরে পুলিশের গুলিতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন।
এরমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মেঘালয় সফর স্থগিতের কথা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বলেন, “মন্ত্রী, একজন সংসদ সদস্য, মন্ত্রীর এপিএস ও জনসংযোগ কর্মকর্তার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মন্ত্রী এখন যাবেন না।”
কেন এই সফর স্থগিত করা হয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরবর্তীতে ‘উপযুক্ত সময়ে’ মেঘালয় যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সফরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা ছিল বলে জানান অপু।