করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার ঘোষিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার গণভবন থেকে অনলানে যুক্ত হয়ে ডিজিটালি এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকেই এটা নিয়ে কথা বলছেন। আমি মনে করি, খুব বেশি কথা বলা বা এটা নিয়ে বেশি তিক্ততা সৃষ্টি করা উচিৎ না। মনে রাখতে হবে আমাদের ছোট ছেলেমেয়েরা, তাদের জীবনটার দিকে তাকাতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে।
“এমনিতেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, এটা তাদের জীবনে বিরাট এক বাধা সৃষ্টি করছে। এরপর যদি আবার ফলাফল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হয়, এতেও কিন্তু তাদের ওপর মানসিক চাপ পড়বে। যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তাদের আমি বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
মহামারীর মতো বিরূপ পরিস্থিতি কেন ফলাফল ঘোষণা করা হল, তাও ব্যাখ্যা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “একবার ভেবেছিলাম যে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে, অবস্থার পরিবর্তন হলে পরে আমরা পরীক্ষাটা নিতে পারব। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা কোনোমতেই বন্ধ হচ্ছে না, এমনকি নতুনভাবে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, তাদের পড়াশোনার পথ যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এরকম একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে এই ফলাফলটা ঘোষণা করলাম।
“পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও একই পদ্ধতিতে ফলাফল ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হল, আমাদের শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটা বছর নষ্ট হয়ে যাক, সেটা আমরা চাই না। তাদের শিক্ষা জীবনটা চলমান থাক সেটাই আমরা চাই। সেই কারণেই আমরা ফলাফলটা ঘোষণা দিলাম। আশা করি, তাদের পড়াশোনা অব্যাহত থাকবে।”
মহামারীর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সুরক্ষার কথা ভাবতে হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “কোভিড সংক্রমণে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই ব্যবস্থাগুলো আমরা নিতে বাধ্য হয়েছি।
“অনেকে সেন্টিমেন্টাল হচ্ছেন, কথা বলছেন পরীক্ষা নিতে। কিন্তু এগুলো করতে গিয়ে যদি কেউ সংক্রমিত হয়, তাহলে তার দায় দায়িত্ব কে নেবে? যারা সমালোচনা করছেন এই পদ্ধতিতে রেজাল্ট দেওয়ার কারণে, তারা নেবেন দায়িত্ব? নিশ্চয়ই তারা নেবেন না। তখন তারা নতুন করে আবার সমালোচনা শুরু করবেন। এটাই আমাদের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে কিছু লোক থাকেই, যা কিছু করতে যান তাতেই একটা খুঁত বের করা। ফলাফলটা কি হবে সেটা তারা চিন্তাও করেন না।”
এইচএসসির ফল প্রকাশ: সবাই পাস, জিপিএ-৫ দেড় লক্ষাধিক
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আমরা যথাযথ চেষ্টা করে যাচ্ছি। হয়ত আমরা যখন আরও বেশি সুরক্ষিত করতে পারব, অর্থাৎ এটা সারা বিশ্বব্যাপী একটা মহামারী…এটা থেকে যখন মানুষ মুক্তি পাবে তখন আবার যথানিয়মে ক্লাস হবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে পারবে। যারা প্রমোশন পাবে তারা আগামীতে পড়াশোনা শুরু করতে পারবে, এবং পরবর্তী পরীক্ষার উপর তাদের ভাগ্য নির্ভর করছে।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে আমরা খুব দ্রুতই স্কুল খুলে দিতে পারব। করোনাভাইরাস আমরা যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখছি, সবাই যদি আরেকটু (স্বাস্থ্যবিধি) মেনে চলেন আমরা এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব এবং খুব দ্রুতই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারব। আমরা আশা করছি, হয়ত আগামী মার্চ-এপ্রিল…আমরা মার্চ মাসটা দেখব।
“আমাদের দেশে এই মার্চ মাসেই ব্যাপকভাবে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। তবে আমরা ফেব্রুয়ারি মাসটা নজরে রাখব, যদি অবস্থা ভালো থাকে পরবর্তীতে আমরা সীমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেব, আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে যেতে পারে সে ব্যবস্থাটা আমরা নেব, এ ধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের আছে। আমরা যত দ্রুত পারি এ ব্যবস্থাটা নেব।”
করোনাভাইরাসের টিকা যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দেওয়া হয় সেই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
“ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন বের হয়েছে। যখন থেকেই শুরু হয়েছে গবেষণা তখন থেকেই আগাম টাকা পয়সা দিয়ে আমরা বুক করে রেখেছিলাম। যখনই এটা আবিষ্কার হবে, যখনই এটা ব্যবহার করার অনুমতি পাওয়া যাবে সাথে সাথে আমরা যেন দিতে পারি। আপনারা জানেন যে আমরা করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি।
“সেখানে আমি এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, আমাদের যারা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, তাদেরও এই ভ্যাকসিনটা যাতে দ্রুত দেওয়া হয়। তাছাড়া এটা সবচেয়ে বেশি দরকার, সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলা, করোনা মোকাবেলায় যা যা ব্যবস্থা আছে গ্রহণ করা। সেই সাথে ভ্যাকসিন তো সবাই পেয়েই যাবেন, তার জন্য সবার মানসিকভাবে তৈরি থাকা।”